– আমাদের অফিসে একটা বাঘ আছে, বুঝলি অগা?
– বাঘ? বলিস কি রে? কিরকম বাঘ? অ্যালবিনো, নাকি মানুষখেকো?
– মানুষখেকো ঠিক নয়, তবে মানুষচেটো বলতে পারিস!
– তোদের সবাইকে ধরে ধরে চাটে নাকি?
– তাল খোঁজে। মওকা পেলেই হালকা করে চেটে দেয়।
– বেশ ইন্টারেস্টিং ব্যাপার মনে হচ্ছে তো। একটু ডিটেইলে বলবি নাকি, বগা?
– বাঘটা সকালে একবার টহল দিতে আসে, এই ধর সাড়ে নটার সময়।
– বাপ্রে, তুই অত সকালে অফিস যাস?
– যেতে হয় কাকা, নইলে চাট খেতে হয়! যাক্গে, যা বলছিলাম, টহল দিতে দিতে দেখে, সবাই যে-যার জায়গায় আছে কিনা। যদি দেখে সবাই অত সকালে এসে গেছে, তাহলে হেঁ-হেঁ করে জিভটা চেটে নিয়ে চলে যায়। কিন্তু যদি কেউ তখনও এসে না পৌঁছয়, তার কল্যাণে বাঘের পোস্ট-লাঞ্চ চাটনীটা জুটে যায়।
– মানে লাঞ্চের পরে এসে তুমুল ঝাড়ে, নাকি?
– ভাবিস না চেল্লামেল্লি করে! বনেদী বাঘ তো, তাই চুপিচুপি পেছনে এসে দাঁড়ায়, মধুর স্বরে নাম ধরে ডাকে, তারপর পড়া ধরে!
– পড়া ধরে? সেকি রে? এ কি স্কুল নাকি?
– বাজে বকিস না, স্কুল কেন হবে? বড় বড় জায়গায় এরকম হয়েই থাকে।
– তাই হবে! কিন্তু যাকে পড়া ধরলো, সে যদি পড়া না পারে?
– ৯৫% ক্ষেত্রেই পারেনা, কেননা বাঘটা এমনভাবে জেরা করতে থাকে যে বেচারারা হালে পানি পায় না, প্রেশারে দু’একটা ভুল করে ফেলে। ব্যস, বাঘের চাটনী রেডি!
– বাপ্রে, একে শিগগিরি সিবিআই জয়েন করতে বল, চোরগুন্ডাদের জেরা করেই কাত করে দেবে। কিন্তু বাঘটা অত সাতসকালে আসেই বা কেন?
– কি করবে বল? বেচারা একটা ফ্ল্যাটে একা থাকে, বোর হয়ে অফিসে চলে আসে।
– বুঝলাম! তা তোকে ধরেনি কোনোদিন?
– ধরেছে তো! এক্কেবারে প্রথম সপ্তাতেই।
– যাঃ! দেরী করে গিয়েছিলি বুঝি?
– নাঃ, তাড়াতাড়ি গিয়ে আনন্দPlus-এ শুভশ্রীর পিঠখোলা ছবি দেখছিলাম।
– হিহি, ফুল কেলো হয়েছিল তো তাহলে, নাকি?
– তা একটু হয়েছিল বটে। বাঘ বলল, ‘তুমি এখন কি করছ?’ আমি বললাম, ‘এই, একটু দেশকালের খবর নিচ্ছি’। সেই শুনে বাঘটাও খানিকক্ষণ শুভশ্রীকে দেখলো, তারপর বাঘাটে গলায় বলে উঠল, ‘এখানে আমরা অফিসের টাইমটা অফিসের কাজেই ব্যয় করি’। তাতে আমি দমে না গিয়ে বললাম, ‘এখনও তো আমাকে কাজ দেওয়া হয়নি’। শুনে ‘অ’ বলে চলে গিয়েছিল!
– যাক্ বাবা, জোর বাঁচা বেঁচেছিলি তাহলে। এ তো পুরো মিরাক্কেলের ‘সেট-এ থাকুন বস্’ এর মতন, তবে তোদেরটা ‘সিট-এ থাকুন বস্’।
– যা বলেছিস মাইরি।
– তোর এই কর্মহীন দশা কদিন চলল?
– বেশিদিন না, তার একদিন পরেই ট্রেনিং শুরু হল।
– বাঘের কাছে?
– না না, অন্য একজন। এ একটু ভাল, যখনতখন পড়া ধরে না, কিন্তু সোজা জিনিসকে জটিল করে ফেলে মাঝেমাঝে, আর তাতে ঘেঁটে লাট হয়ে যায়। এর নাম আমি দিয়েছি ঘাঁটাভাবুক বাবু।
– বেশ করেছিস। তা এই মহামহিমই কি তোদের ম্যানেজার?
– না। ওটা তো ভালু।
– ভালু?
– হ্যাঁ, বাংলায় যাকে বলে ভাল্লুক আর কি! মালটাকে অনেকটা ভাল্লুকের মতন দেখতে।
– তাই বল। সেটা কেমন?
– বেশ কিউট। আর কিছু পারুক না পারুক, ভালু দুটো বিষয়ে এক্সপার্ট।
– কি কি?
– এক, ফোনে ক্লায়েন্টের সঙ্গে কথা বলা। এমন গলায় কথা বলে না, পুরো মাখন এক্কেবারে! আর দুই, পাওয়ারপয়েন্টে স্লাইড বানানো। সারাদিনে মনে হয় ডজনখানেক বানায়।
– ওরেব্বাস! এত কি বানায় রে?
– হুঁ হুঁ বাওয়া! প্রজেক্ট প্ল্যান, সেই প্ল্যান কিভাবে ফলো করা হবে তার প্ল্যান, ক্লায়েন্ট মিটিং-এর অ্যাজেন্ডা কি হবে, তার প্ল্যান, মিটিং-এর পরে সেই অ্যাজেন্ডা কতটা ফলো করা হল তার প্ল্যান –
– বুঝেছি বুঝেছি। এ তো পুরো ডেইলি প্ল্যানার রে বগা?
– সে আর বলতে! একদিন হেব্বি রোয়াব নিয়ে আমাকে বলল, ‘ট্রেনিং কেমন হচ্ছে? কোথাও আটকাচ্ছে নাকি?’ সেদিন ভাবুক আসেনি, আর আমি পুরো কোয়েশ্চেন ব্যাঙ্ক হয়ে বসে আছি। ভালুকে বললাম, ‘এই কোডটা একটু বুঝিয়ে দাওনা!’ সেই শুনে ভালু কাঁচুমাচু হয়ে বলল, ‘আজ অনেক বিজি, দশটা স্লাইড, তিনটে মিটিং, তুমি বরং কাল ভাবুকের থেকে জেনে নিয়ো’।
– হে হে। তুই কি বললি?
– কি আবার বলব? ও স্লাইড বানাতে গেল, আর আমি কেটে পড়লাম।
– বাঃ! তা তোর ট্রেনিং কি এখন শেষ হয়েছে? কাজ শুরু করেছিস?
– ট্রেনিং এখনও চলছে, তবে পাশাপাশি কাজও চলছে।
– জিও কাকা। কেমন লাগছে?
– ভাল। নতুন জিনিস শিখছি।
– বাঃ! বড় বড় কোম্পানীতে শুনেছি মীটিং হয় মাঝেমাঝে, তুইও সেখানে যাস?
– অবশ্যই, রোজই থাকে।
– দিনে কতগুলো থাকে মোটামুটি?
– বেশি না। সকালে একটা, সারাদিনের কর্মসূচী ঠিক হয় তাতে। দুপুরে একটা, তাতে কতখানি কাজ এগলো, সেটা বলা হয়, আর ঝাঁপ বন্ধ করার পরে আরেকটা, সারাদিনের আপডেট দিয়ে। ক্লায়েন্ট মীটিং থাকলে তখন আরো দুটো এক্সট্রা হয়।
– মানে? বুঝলাম না ঠিক।
– জানতাম, বুঝবি না। ওদের সঙ্গে মীট করার আগে নিজেদের মধ্যে বসা হয়, যেখানে সেই মীটিং-এর স্ক্রীপ্ট লেখা হয়, আর ক্লায়েন্ট মীটিং শেষ হলে, সেটা কেমন হল, তাই নিয়ে বসা হয়।
– ওরে থাম্ থাম্, মাথা ভোঁভোঁ করছে! এত মীটিং করলে তোরা কাজ করিস কখন রে বগা?
– বাজে বকিস না, কাজ ঠিক নেমে যায়। আমাদের ক্যাপাটা ভুলিস না!
– সে তো বটেই। কিন্তু তুই যে বললি ট্রেনিং এখনও চলছে, এত কি ট্রেনিং রে? সেখানে কি বাঘ, ভালু, ভাবুক – এরা থাকে?
– ট্রেনিং না চললে উন্নতি করব কি করে? তাই ট্রেনিং মাস্ট! ভালু সবকটাতেই থাকে, অন্যেরা মাঝেমাঝে।
– বাবা! তুই তো তাহলে খুব অল্পদিনেই কেউকেটা হয়ে যাবি রে বগা! কিন্তু ভালু সেখানে কি করে?
– ও স্লাইড বানায়, হোয়াটস্অ্যাপ করে, আর আমরা সবাই হাজির কিনা, সেটা দেখে।
– আর তোরা?
– আমরা কাটাকুটি খেলি, ফিসফিস করি, চিরকুট পাসাপাসি করি আর ভালুর মুন্ডপাত করি।
– হিহি, ভাল করিস। ভালু ধরতে পারেনা?
– ধুর বে! মনে নেই, ঠাকুরস্যরের নাকের ডগায় বসে আমরা ‘বুক ক্রিকেট’ খেলতাম? উনিই কোনোদিন ধরতে পারলেন না, আর এ তো ভালু!
– তাও ঠিক।
– এনিওয়ে, এখন আসি অগা, পরে কথা হবে। এখন পরপর তিনটে মীটিং আছে।
– যা যা, শিগ্গির যা। ক্লায়েন্ট মীটিং-এর স্ক্রীপ্টটা ভাল করে মুখস্থ করিস, ছড়াসনা আবার!
– হে হে, ধন্যবাদ। চল্ বাই।
– বাই।
“Thakur Sir er Kata kuti’… just onoboddo…. aar power point holo nijer choto kaaj ke boro kore jahir kora ekta maddhyom chara aar kichu na….otey je joto karu karjo korte parbe , sey toto kaajer 🙂
একদম ঠিক বলেছিস রে সিধু। 🙂
কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ। 🙂
ভাগ্যিস আমি এই আপিসে চাকরি করি না।
ভাগ্যিস! 🙂