– ছিঃ! এটা কোনো শট হল? মারল একদিকে, বল গেল আরেকদিকে!
– চারটে রান তো হল, নাকি?
– হুঃ! চারটে রান হলেই হল? টেকনিক বলে তো কিস্যু নেই এদের।
– টেকনিক ধুয়ে কি জল খাবে নাকি? রানটাই আসল, বুঝলে? কিভাবে হল সেটা ইম্মেটেরিয়াল।
– কি বলছ? এই তোমাদের মতন কিছু লোকের জন্যেই এরা এখনও করে খাচ্ছে। কি সব হরেন্ডাস ব্যাপার! কুড়ি ওভারে খেলা শেষ? আমাদের তো সেট হতেই কুড়ি ওভার লাগতো।
– দেখো কাকা, অত সময় এখন কারো নেই। বাইশবার জাজমেন্টে বল ছাড়বে, তেত্রিশবার ব্লক করবে, তারপর ছাপান্নতম বলে বই থেকে তুলে এনে একটা কভারড্রাইভ মারবে – অত সময় কে দেবে তোমাকে? ততক্ষণে ট্যুইটারে তোমার মুন্ডুপাত শুরু হয়ে যাবে।
– বাজে বোকো না। ক্লাস ব্যাপারটার একটা আলাদা দাম আছে, বুঝলে? ওটা সবার জন্য নয়।
– বটেই তো! সেই ক্লাস মাড়িয়েই তো খেলাটাকে তোমরা ছড়াতে দিলে না। এত বছর হয়ে গেল, সেই হাতে-গোনা কয়েকটা দেশই খেলাটা খেলে।
– আর তোমরা যে ছড়িয়ে একেবারে মাঠে-ময়দানে করে দিলে, তার বেলা? ওঃ, কি অসহ্য ঘেমো গরম, তার মধ্যে মদ্দাগুলো ছুটে চলেছে। আমরা কি সুন্দর শীতের মিঠে রোদ গায়ে মেখে খেলতাম, আর দর্শকরা কমলালেবুর খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে আমাদের খেলা দেখতো।
– যত্তসব আদিখ্যেতা! আজকাল আর কেউ কমলালেবুর খোসা ছাড়িয়ে খায়না, বুঝলে? রেডি-টু-ড্রিঙ্ক অরেঞ্জ জ্যুস বেরিয়ে গেছে, এমনকি ‘উইথ পাল্প’ এবং ‘উইদাউট পাল্প’ ক্যাটাগরিও হয়ে গেছে। বোতল খোলো আর ঢকঢক গলায় ঢালো, ব্যস!
– হুঃ!
– তাছাড়া এই মাগ্যিগন্ডার বাজারে শুধু শীতকালে খেলা করলে চলবে? বাকি বছরটা চলবে কি করে?
– কেন? আজকাল তো রাম-শ্যাম-যদু সবাই অ্যাড করে। খেলাটার বারোটা না বাজিয়ে মুখে রঙ মেখে সং সাজলেই তো হয়!
– হয়, আবার হয় না-ও। খেলোয়াড়েরা, তোমার কথা অনুযায়ী রাম-শ্যাম-যদুরা, অ্যাড করে পার পেয়ে যাবে, কিন্তু হোয়াট অ্যাবাউট মধু? ওর বউ-বাচ্চা কি খাবে? তাছাড়া ক্রিকেট বোর্ডের কি হবে? বোর্ডের কর্মকর্তারা তো আর অ্যাড পায় না! সবার কথাই তো ভাবতে হবে কাকা!
– ইস্! অত সুন্দর বলটাকে কি কুৎসিতভাবে ছক্কা মেরে দিল! এটা কি শট?
– হেলিকপ্টার শট।
– হেলিকপ্টার শট? সেটা কি? খায়, না মাথায় দেয়?
– এটা এখন খুব চলছে। পাড়ায় পাড়ায় যেসব ক্রিকেট ক্যাম্প আছে, সেখানে কোচেদের কাছে শিক্ষার্থীদের দুটো দাবি থাকে। আর কিছু শেখান আর না-ই শেখান, হেলিকপ্টার শট আর দিলস্কুপ – এই দুটো মাস্ট।
– দিলস্কুপ?
– হ্যাঁ কাকা। শটটা দেখলে তুমিও ফিদা হয়ে যাবে। মারবে মাঠে, বল গিয়ে পড়বে স্টেডিয়ামের ছাদে!
– ওরেবাবা রে! আজকালকার ব্যাটগুলোও কিরকম গোদাগাম্বাট টাইপের। ব্যাট না গদা, বোঝা দায়!
– সেটা ঠিক বলেছ। আমাদের সময়ে ব্যাটে একটা সুইট স্পট থাকত, এখন গোটাটাই সুইট ব্যাট। কী লীলা!
– একি? সবাই হাততালি দিচ্ছে কেন? লাস্ট দুটো বলে তো রান হয়নি।
– হেঁ হেঁ। ডট বলের জন্য।
– আজকাল ডট বলের জন্যেও হাততালি দেয় মানুষ?
– দেবে না? দেখছ তো বোলারটার অবস্থা! বেচারা আগের ওভারে চারটে ভাল বল করেও গোটা ওভারে বাইশ রান দিয়েছে। এই ফর্ম্যাটে উইকেট না নিলেও চলবে, এখানে দুটো ডট বল একটা উইকেটের সমান।
– কি অবস্থা! আমাদের সময়ে বোলার একটা ভাল বল করলে আমরা সেটাকে সম্মান জানাতাম, এখন তো দেখি সেসবের বালাই নেই। যা পাচ্ছে, ভাল হোক খারাপ হোক, উড়িয়ে দিচ্ছে!
– আরে কাকা, আজকাল লোকে নিজের বাপমা-কেই সম্মান করে না, তায় আবার বোলার! এরকম অন্যায্য আশা কর কি করে তুমি?
– সব কিরকম ঘেঁটে যাচ্ছে! একটা কথা, বোলারটা আম্পায়ারের থেকে তোয়ালে নিয়ে হাত মুছছে কেন?
– কি করবে! কিছুদিন আগে নিজের তোয়ালেতে হাত মোছা নিয়ে কি কেলো হল মনে নেই? একটা বোলারের কেরিয়ারটাই তো ভোগে চলে গেল। খেলা ছেড়ে বেচারা এখন সিনেমায় নাচ দেখায়!
– ওঃ হ্যাঁ, মনে পড়েছে! এত টাকাপয়সা পেয়েও এদের লোভ যায়না, আরো চাই। আমাদের সময়ে আমরা কতটুকু টাকা পেতাম বল? না হে, খেলাটা আর ‘জেন্টল্ম্যানস্ গেম’ রইলো না।
– দুঃখ পেয়ে লাভ নেই। দুনিয়া বদলাচ্ছে।
– হঃ! একটা কথা বল, মাঠের বাইরে ওই সুন্দরীরা নাচাকোঁদা করছে কেন? ওরা কারা?
– ওদের চিয়ারলিডার বলে। নেচেকুঁদে খেলোয়াড় আর দর্শকদের মনোরঞ্জন করাই ওদের কাজ।
– সেটা আবার কিরকম?
– ধর, একটা ব্যাটসম্যান চার হাঁকালো। চিয়ারলিডার তখন নেচেকুঁদে তাকে উৎসাহ দেবে, জায়ান্ট স্ক্রীনে তার নাচ দেখে ব্যাটসম্যান আরো উৎসাহ পাবে আরো চার-ছয় মারার। সেরকমই –
– বুঝেছি বুঝেছি, আর বলতে হবেনা। সোজা কথায়, ওদের কাজ হল এই মোচ্ছবের কুশীলব এবং দর্শকদের হাল্কা হিট দেওয়া। তারাও খুশ, আর শো-টাও হিট। হেব্বি লাগছে কিন্তু।
– হেঁ হেঁ, খুব ভুল কিছু বলোনি বটে। যাকগে, এখন উঠবে তো? প্রথমার্ধ শেষ হল। এত গালাগালি দেওয়ার পরে তুমি নিশ্চয়ই সেকেন্ড হাফটা দেখবে না?
– কেন দেখব না? এই গোটা প্রহসনের মধ্যে ওই নাচটাই তো দেখার মতন। হিট যখন নিচ্ছিই, তখন গোটাটাই নিই। আবার কবে আসা হয়!
– ধন্যি মাইরি তুমি কাকা! খেলাটা গৌণ করে খ্যামটাটাকেই মুখ্য করে দিলে?
– চুপ করে বোসো। নাচটা দেখতে দাও ভাল করে।
– বোঝো!
চমৎকার। আমি পড়ার পরে বেশ কিছুক্ষন বসে বসে হা হা করে হাসলুম। আমি যদিও ক্রিকেট খেলা দেখিনা। খবর ও রাখিনা, কিন্তু লেখার আসাধারন রসবোধ, লেখাটা পড়তে বাধ্য করলো। দিব্যি লাগলো। চালিয়ে যাও ভায়া। এবারে অনেক দিন পরে পোস্ট পেলাম। আরো একটু তাড়াতাড়ি লেখা দিলে হয় না?
অনেক ধন্যবাদ দাদা। 🙂
চেষ্টা করব তাড়াতাড়ি লেখা দিতে। আসলে আদতে ল্যাদখোর তো, তাই আর কি, মানে… 😀
Darun hoeche ekdom hashyo koutuk e bhorpur t20 package…aage gentlemen’s game chilo aar ekhon except gentleman, baki sobar game 🙂
একদম ঠিক। দুঃখ হয় এসব দেখে!
Nam ta asadharan Cricket er bangla jhijhi seta money chilo naa , money porlo lektha porar por. Asadharan lekha. Test Vs. T-20 ,satyi . ki chilo er ki holo . tobe oneke khamta nachch ba tatha kothito film star deri dekhte jay setao satyi. Tumi ekta boi leko tomar hate jadu achche .
অনেক ধন্যবাদ টুবুন। 🙂
darun দিলস্কুপ lekha………………
ধন্যবাদ বন্ধু।