“কাল নির্বাক দেখে এলাম, বুইলে গুরু?”
বাক্যটা শুনে আমার বাক্য হরে গেল। অন্য কেউ এটা বললে ব্যাপারটা মেনে নিতাম কিন্তু বক্তা যদি পাঁচু মস্তান হয়, তাহলে বাক্য হরে যাওয়ার কারণ থাকে বৈ কি! পাঁচুও আজকাল সৃজিতের সিনেমা দেখছে? ব্যাপারটা কি সৃজিতের পক্ষে, পাঁচুর নিজের পক্ষে আর গোটা বাংলা ছবির পক্ষে, একটা ভাল লক্ষণ?
আমার চোখেমুখে একটা অবাকভাব নিশ্চয়ই ফুটে উঠেছিল, কেননা পাঁচু বলল, “ওরকম হুব্বার মতন তাকিয়ে আছ কেন? আমি সিনেমাটা দেখতে গিয়েছিলান সুশের জন্য”।
সুশ মানে নিশ্চয়ই সুস্মিতা সেনের কথা বলছে? আমি বললাম, “তুমি সুশের ফ্যান বুঝি?”
একগাল হেসে পাঁচু বলল, “সে আর বলতে! রিত্তিকের একটা সিনেমা ছিল না, সেখানে সুশের একটা নাচ ছিল…”মেহবুব মেরে” গানের সঙ্গে…ওঃ, পুরো মাখন নেচেছিল মাইরি সুশ ওখানে। সেই থেকে আমি ওর ফ্যান!”
আমি বললাম, “সে তো অনেককাল আগের ঘটনা। তা এই সিনেমায় কেমন দেখলে ওকে?”
একটু দুঃখিত মুখে পাঁচু বলল, “ধুস্, ওর বয়েস হয়ে গেছে গুরু, সব কিরকম ঝুলে-ঝুলে গেছে। সেই চেকনাইটা আর নেই” বলে ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ফেলল পাঁচু।
ভাবলাম বলি – সবাই কি আর মাধুরী দীক্ষিত যে অনন্তযৌবনা হয়ে থাকবে? কিন্তু ওর উদাস মুখের দিকে তাকিয়ে আর কিছু বললাম না। শুধোলাম, “সিনেমাটা কেমন লাগলো?”
পাঁচু খানিকক্ষণ মাথা চুলকোয়, তারপর বলে, “পুরো খিল্লির চূড়ান্ত, বুইলে গুরু। যা সব ফান্ডা দিল না, পুরো হুব্বা হয়ে বসেছিলাম হল্-এ”।
হওয়ারই কথা। সৃজিতের ছবি বোঝার এলেম কি পাঁচুর আছে? প্রশ্ন করলাম, “গল্পটা একটু বলবে?”
সোফায় শরীর ছেড়ে দিয়ে পাঁচু বলে, “গল্প? খিল্লির আবার গল্প হয় নাকি? সুরুতে একটা বুড়োভামকে দেখালো। মালটা জাঙ্গিয়া পড়ে, ভুঁড়ি বাগিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, আর আয়নায় নিজেই নিজেকে চুমু খায়। বাথরুমের চৌবাচ্চায় যেরকম হিরোইনেরা মাল খেতে খেতে ফেনা মেখে চান করে, এই হাড়-হাভাতে মালটাও তাই করে। তবে গুরু, একটা ব্যাপার দেখে যা হাসি পেলনা, কি বলব!”
“কি জিনিস?”
“মালটা চান করে উঠে পুরো এক সিসি ডিও লাগালো মাইরি। অতখানি ডিওতে তো আমাদের জজবাগান বস্তির সবার একমাস চলে যাবে। তাছাড়া বুড়োটা হেব্বি তারকাটা মাল। রেস্টুরেন্টে গিয়ে নিজেই নিজেকে ‘হ্যাপি বার্থডে’ জানায়, কেক কেটে নিজেই নিজের তোবড়ানো গালে মাখায়, তারপর ফুলটু মাল খেয়ে বাড়ি ফিরে আপনা হাত জগন্নাথ করে ঘুমিয়ে পড়ে”।
আমি একটু থমকে যাই, ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করি। পাঁচুর বর্ণনা কতখানি সত্যি কে জানে! তবে মোদ্দা ব্যাপারটা বুঝে ওকে বলি, “কেউ কেউ ওরকম থাকে, যারা নিজেদেরকেই সবচেয়ে বেশী ভালবাসে। ওদের নার্সিসিস্ট বলে”।
পাঁচু একটা বিচ্ছিরি রকমের হাসি দিয়ে বলে, “বাকোয়াস! ওদের ব-এ আকার ল বলে, বুইলে গুরু?”
চুপ করে যাই। এসব কথা একে বলার কোনো মানেই হয়না, ফালতু সময় নষ্ট!
পাঁচু ফিক্ করে হেসে বলে, “রাগ করলে গুরু? আরো আছে। এখানে একটা গাছ দেখিয়েছে, বুইলে? সুশ যখন সেই গাছের তলায় একটা বেঞ্চিতে বসে থাকে, তখন সেই গাছটা ওকে আদর করে। সালা, এরকম কেউ কখনও সুনেছে?”
আমি একটু ট্যান খেয়ে যাই, যদিও পাঁচুকে সেটা বুঝতে দিই না। বলি, “কিরকম করে আদর করে?”
পাঁচু বলে, “হঠাৎ করে হাওয়া দ্যায়, সুশ বেঞ্চিতে সুয়ে পড়ে, মনে হয় ঘুমিয়েই পড়ে। ওর ওড়নাটা উড়ে যায়, খানিকক্ষণ তেড়ে হাওয়া দ্যায়, তাতে কি হয় মা ভগাই জানে। হঠাৎ দেখি গাছ থেকে টপ টপ করে দু’ফোঁটা সাদা সাদা জিনিস পড়ে। ওগুলো কি গুরু? গাম, নাকি বীর্য?”
আগের অসাফল্য ভুলে গিয়ে আমি পাঁচুকে ফের বোঝাতে যাই, “এটা আসলে, ইয়ে আর কি। মানে বোঝানো হচ্ছে যে শুধু মানুষই মানুষকে ভালবাসে না, গাছও মানুষকে ভালবাসতে পারে”।
“অ! কি জানি বাওয়া! সালারা বিদগ্ধ গাম্বাট, ওদের লেভেলই আলাদা। এখানে তো একটা কুত্তাকেও দেখিয়েছে। ওঃ সরি, কুত্তা না, কুত্তী, সুশের বয়ফ্রেন্ডের পোসা কুত্তী। সেটা আবার সুশকে কামড়ে দিয়েছিল”।
আমি বলি, “এর মানে হচ্ছে যে ওই কুকুরটা সুশকে সহ্য করতে পারেনি। ও চায়নি সুশ ওর ভালবাসায় ভাগ বসাক”।
পাঁচু হেসে বলে, “মরণদশা! তার মানে নিশ্চয়ই সময়টা ভাদ্রমাস ছিল, ওই সময়েই কুত্তাদের হিট ওঠে কিনা!”
কি আর বলি এর উত্তরে! কিন্তু শেষে কি হল, সেটা জানার জন্য পাঁচুকে বলি, “শেষমেশ কি হল?”
পাঁচু বলে, “সেসটা তো আরো খিল্লি! একটা ডোম, বুইলে গুরু, গাঁজা ফোঁকে, মাল খায়, মোবাইলে গান সোনে আর মর্গে লাস পাহারা দ্যায়”।
“তাতে কি হল? সব ডোমেরাই মদগাঁজা খায়, ওতে দোষের কিছু নেই”।
“দাঁড়াও, সেস হয়নি এখনও। মালটা ডেডবডিকে ভালবাসে, বলে নাকি ফ্রেনসিপ চায়। কি আধফাটা মাল ভাবো! এসব দেখেসুনে না মাইরি, ফলফলাদি আমার সব টাকে উঠে গেছে”।
আমি মিনমিন করে বলার চেষ্টা করি, “এরকম লোকও আছে দুনিয়ায়। এই ব্যাপারটাকে নেক্রোফিলিয়া বলে”, কিন্তু পাঁচু আমার কথা শুনতেই পায়না। হ্যাহ্যা করে হেসে বলে, “তবে মাইরি, এই প্রথম দেখলাম বাংলা বইয়ের নাম ইংলিসে লেখা”।
“মানে?”
“নাম দেখানোর সময় বইয়ের নামটা ইংলিসে দেখালো তো! তখনই বোঝা উচিৎ ছিল, সব বিচিত্রবীর্যের বংসধর, মালপত্র সব মাথায় উঠে গেছে। নইলে এরকম বই কেউ বানায়? যত্ত বাকোয়াস!”
পাঁচু কেটে পড়ে, আমি নির্বাক হয়ে বসে থাকি। খানিকবাদে নজরে আসে, পাঁচু সিনেমার পোষ্টারটা ফেলে গিয়েছে।
bohudin por pnachu ferot elo..arektu ghono ghono dekha korun or sathe 🙂
ধন্যবাদ রোশনী। 🙂
বেশ, আপনার কথা মাথায় রাখবো। 🙂
অসাধারণ! এটা পড়লে সৃজিত আত্মহত্যা করবে :p
good one 🙂
ধন্যবাদ বন্ধু। 🙂
কি আর বলব! 😦
কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ সৌরভ।
সালারা বিদগ্ধ গাম্বাট 😀
ভীষণ হাসলাম… ছিজিত যদি এটা পড়ে…ওর-ও বেম্ভতালু তে উঠে যাবে সব…বলাই বাহুল্য 😛
ইয়ে, মানে, পাঁচুটাকে কোনোদিন সামলাতে পারলাম না। 😦
পাঁচু erokom aaro bhabna-chinta koruk… 😀 (y)…
এরকম উমদা সমালোচনা পেতে সুজিত আরো রুদ্দি মাল বানাক। ক্ষতি নেই। ভায়া, কুর্নিশ। দারুন লিখেছো।
ধন্যবাদ দাদা। 🙂
তবে আমি চাই সৃজিত যেন এরকম জিনিস আর না বানায়…
heheh
Panchu r comment kono film critic er kom na…pati bangla bhashae bujhiye diyeche je bhuleo nirbaak dekho na 🙂
যা বলেছিস মাইরি!!
NIrabak er emon i je sobai ke Nirbak kore dilo emon ki Pachchu keo. Tobe Pachur sange dekha hoye bhalo laglo.
ধন্যবাদ টুবুন। 🙂
panchur dekha peye khub valo laglo………ai choritto ta amake odbhut tane bujli…..nachiketar akta gaan chilo ………..kokhuno hingse hoy, obokashe osomoye, ami ki panchu hote pari…………
পাঁচুকে বলব তোর কথা…শুনলে খুশী হবে। 🙂