– কিরে অগা, দেশের অবস্থা কি বুঝছিস?
– আর ভাই! আমরা হলাম গিয়ে উলুখাগড়ার দল, আমাদের বোঝা না-বোঝাতে কি কিছু এসে যায়, বল?
– তা বললে চলবে? ইদানিং কত্ত নতুন নতুন ব্যাপার ঘটছে বলতো দেশে?
– কি আবার ঘটলো?
– সেকি রে? এই যে কিছুদিন আগে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যোগা যোগ হল, এই যোগাযোগটা সম্পর্কে কি তুই কিছুই জানিস না?
– ওঃ ওটা! আর বলিস না বগা, ‘বার’ খেয়ে আসন করতে গেসলুম, শালা থাই মাস্লটা টেনে ধরল, অভ্যাস নেই তো! তিনদিন শুয়ে ছিলুম।
– এই হচ্ছে তোর দোষ! নিজেকে বলছিস উলুখাগড়া, এদিকে ‘বার’ খাচ্ছিস! উলুখাগড়া হওয়ার প্রধান ক্রাইটেরিয়ন হচ্ছে, কোনো অবস্থাতেই ‘বার’ এবং ‘খার’ এই দুটো জিনিস না খাওয়া। সেই স্লোগানটা জানিস না?
– কোন্টা?
– সেই যে – বার খেয়ে ক্ষুদিরাম হোয়োনাকো কাকা/ভাইপোরা যাবে কেটে, মাঠ হবে ফাঁকা/ জিও কাকা, তুমি তখন একা!
– আইশ্লা, হেব্বি তো! এটা কি তোর বানানো?
– নাঃ, অন্য একজন বানিয়েছে, আমি শুধু মওকা বুঝে ঝেড়ে দিলাম।
– তা তুই আসন করিসনি?
– না করলে চলবে? রাজশক্তির বিরুদ্ধে যাওয়ার দম আমার নেই, তাই আম্মো তিনটে আসন করেছি।
– বলিস কি রে? কি কি?
– সকালে বাজারাসন, সারাদিন ল্যাদাসন আর দুপুরে ভরপেট পাঁঠা খেয়ে শবাসন – ধর্মপালনও হল, থাইয়ের মাস্ল-ও বাঁচলো।
– পায়ের ধূলো দে মাইরি। কিন্তু পাঁঠা কেন?
– কেন আবার কি? মনে নেই, সেদিন ছুটি ছিল, আর ছুটির দিনে পাঁঠা তো অবশ্য পদ। এই পদের কথায় মনে পড়লো – বল দেখি, দয়া, মায়া, মমতা এগুলো কি পদ?
– হঠাৎ এই প্রশ্ন? এগুলো তো, ইয়ে মানে, বিশেষ্য পদ।
– ঠিক! এইজন্যেই তোকে আমি এত ভালবাসি রে অগা। কিন্তু বর্তমানে এদের চারিত্রিক বদল ঘটেছে, এরা এখন আর পাতি বিশেষ্য নয়, এদের পদোন্নতি হয়েছে।
– ইয়ে মানে, ঠিক বুঝলাম না।
– গাড়ল! এগুলো এখন বিশেষ বিশেষ্য পদ, যাকে পিতৃভাষায় বলে প্রপার নাউন। এইসব প্রপার নাউনদের ইম্প্রপার কাজকর্ম দেখে কমন নাউন, অর্থাৎ তোর-আমার মতন উলুখাগড়াদের অবস্থা টাইট হয়ে যাচ্ছে।
– যা বলেছিস মাইরি। আমার তো মনে হয় এরা আসলে আপদ! কাজের বেলায় নেই, খালি অকাজের পর অকাজ করে যাচ্ছে।
– ওরে পাগল, ওটাই ওদের কাজ, নইলে আর ওরা প্রপার নাউন কিসের? প্রপার নাউন হওয়ার ওটাই তো ক্রাইটেরিয়ন – কাজ কম, অকাজ বেশী।
– হুঁ! যা দোলাচল চলছে চারিদিকে, ভয় হয় কখন না টেঁসে যাই।
– দোলার কথায় আবার মনে পড়ে গেল – দোলাচ্ছেন, তিনি দোলাচ্ছেন!
– সত্যিই, ক্যালি আছে কিন্তু। বলে কিনা, কান ধরে ওঠবোস করুন, নইলে চড় খান! এ যেন সেই সাতদিনের জেল নইলে একসপ্তার ফাঁসি!
– সে তো বটেই। মাথার ওপর মমতাময়ী দিদির হাত থাকলে আমিও ওরকম অপশন দিতে পারি, ইনফ্যাক্ট দুটো কেন, আরো বেশিই পারি।
– ভাগ্যিস! তা এদের কোনো শাস্তিটাস্তি হবে না?
– ক্ষেপেছিস? শাস্তি কেন হবে? এদের দিকে চোখ তুলে তাকাবার মুরোদ আছে কারো? চোখ তুললেই ব্যস, চোখের মণিগুলো দিয়ে গুলি খেলা হবে, সেটা শুনিসনি?
– হ্যাঁ শুনেছি, যুবরাজ বলেছে।
– তবে? তাছাড়া এরা সব কচিকাঁচার দল, কি বলতে কি বলে ফেলেছে, এই নিয়ে এত শোরগোল তুলে তো লাভ নেই। তবে এই যুবরাজকে দেখলে আমার ভুবনের কথা মনে পড়ে যায়।
– কে ভুবন? ‘লগান’-এর?
– ধুস্ শালা, এ ভুবন সে ভুবন নয়। আরে ভুবন রে…যার মাসি ছিল… যে ভুবনের সব খারাপ খারাপ কাজগুলোকে সমর্থন করত… বুঝতে পেরেছিস?
– বুঝেছি! ভুবনের ছিল মাসি, আর যুবরাজের আছে পিসি, তাইতো?
– মোক্ষম ধরেছিস! নাঃ, বোকা হলে কি হয়, তোর বুদ্ধি আছে।
– হেঁ হেঁ! কিন্তু একটা কথা বল, সেই ভুবনের তো লাস্টে ফাঁসি হয়েছিল, তাই না? তা এরও কি তাই হবে?
– না, সেটা হবেনা।
– কেন?
– নাটা মল্লিক মারা গেছে, ফাঁসিটা দেবে কে?
– হুঁ! সেটা অবশ্য ঠিক। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় কি বলতো?
– কি?
– রণিদার ভাষায় বলতে হলে, এদের সবকটাকে কুকুর-কুকুর-কুকুরের মতন ক্যালানো উচিৎ!
– অগা, ‘বার’ খাস না, আগেও বলেছি, আবার বলছি! কখন জেলে ভরে দেবে, জানতেও পারবি না। হয়ত বউকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোতে গেলি, আর গারদের মধ্যে মাটির কলসী জড়িয়ে ঘুম থেকে উঠলি! তাছাড়া কুকুরকে অত হ্যাটা দিসনা ভাই, ওদের স্ট্যাটাস আমাদের থেকে ভাল।
– মানে?
– মানে? আজকাল কুকুরের আধার কার্ড হয়, আইটিআই পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ডে ওদের ছবি থাকে, এমনকি পিজি-তে ওদের ডায়ালিসিস অবধি হয়। কাজেই ওদের আর হেলাফেলা করা যাবেনা গুরু।
– হুম, তা বটে! শুনেছি বিদেশে কুকুর নাকি মহাকাশে যায়, তাহলে আমাদের এখানে সামান্য হাসপাতালে গেলে কি আর যায় আসে?
– বটেই তো! দেশী কুত্তাদেরও এখন বিদেশী ল্যাজ গজাচ্ছে ধীরে ধীরে।
– যা বুঝলাম, দেখে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনোই অবদান রইলো না।
– সে তো বটেই। উলুখাগড়া হওয়ার আরেকটা ক্রাইটেরিয়ন হল – ভাল মানুষ না হলেও চলবে, তবে ভাল দর্শক হওয়াটা অবশ্যকর্তব্য।
– হুঁ!
– অত হতাশ হোস না অগা। তোকে আরো দুটো জিনিস শিখিয়ে দিই। একনম্বর, যোগ কর, ভোগ কর।
– কি যোগ করব?
– মাইরি, মাঝেমাঝে তুই কিরকম গাড়ল হয়ে যাস। এই দেখছি চারকোণ থেকে বুদ্ধির ঝলকানি, আবার খানিকক্ষণ পরেই দেখছি নির্বাক হুব্বাগিরি। কনসিস্টেন্সি আনতে হবে বস্। এখন টি-টোয়েন্টির যুগ, ধরে খেলার সময় আর নেই। যোগ মানে যোগব্যায়াম, যেটা আমাদের জীবনে যোগ হয়েছে।
– অ! মানে ওই ল্যাদাসন আর শবাসন, তাইতো?
– একদম।
– আর দ্বিতীয়টা?
– সেটা একটা গান। দাদু লিখেছেন, আমি এট্টু মডিফাই করেছি। সেটাকে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবি।
– শুনি কিরকম।
– ‘মম চিত্তে, নমো কৃত্যে, চিন্তা নাই, টাটাবাইবাই, টাটাবাইবাই, টাটাবাইবাই…”
– আইশ্লা! মডিফাই কি রে, এ তো মোদিফাই!
– সবাইকে নিয়েই তো চলতে হবে কাকা। আমাদের স্কুলজীবনে গোবিন্দার সেই গানটা আজকের প্রেক্ষিতে একদম অ্যাপ্রপ্রিয়েট।
– কোনটা রে?
– ‘সেন্টারেতে বাবা, রাজ্যেতে মা, যখন-যেমন বলবে গাইবো সারেগামা’।
– ওরেবাবা রে, আরেকবার পায়ের ধূলো দে মাইরি!
– হেঁ হেঁ। অনেক ভাটবাজি হয়েছে, গলা শুকিয়ে গেছে। চল্, এবারে একটু ঢুকুঢুকু হয়ে যাক। এতকিছু শেখালাম, ট্রীটটা তুইই দে।
– অবশ্যই বগা। চল লেটস্ গো।
দিব্য। খাশা। 🙂
ধন্যবাদ দাদা। 🙂
darun….onekdin por oga & boga r rosalo conversation pelam…eddom contemporary !
ধন্যবাদ বন্ধু। 🙂
Asadharan lekeha , Shobo niye khela te tumi ekbare asdharan , Bango lekha te tumi sidhdho hosto hoye uthechcho.
ধন্যবাদ। 🙂
ভাল মানুষ না হলেও চলবে, তবে ভাল দর্শক হওয়াটা অবশ্যকর্তব্য……….what a philosophy…..osadharon
ধন্যবাদ সুজন। 😀