শহরে দুটো মারকাটারি সিনেমা চলছে – বাহুবলী আর বজরঙ্গী। শনিবার দিন কোন্টা দেখতে যাব সেই নিয়ে একটু ধন্ধে পড়ে গিয়েছিলাম। সেকেন্ড পনেরো প্রচুর চিন্তাভাবনা করার পরে শিবলিঙ্গ ঘাড়ে প্রভাসের চেয়ে ফুটফুটে বাচ্চা কাঁধে সলমানকে বেশী মনে ধরলো।
তাছাড়া রথ মানেই যেমন পাঁপড়ভাজা, বিগত কয়েকবছরের ট্রেন্ড অনুযায়ী ঈদ মানেই সেরকম সলমানের সিনেমা। তাই দুপুরে পরোটা-মাংস-কাবাব-শির খুর্মা সাঁটিয়ে সন্ধ্যা ছটার শোয়ে চলে গেলাম হুমা সিনেমাহল্-এ, ‘বজরঙ্গী ভাইজান’ দেখতে।
কেন জানিনা, সলমানের সঙ্গে আমি চেতন ভগতের প্রচুর মিল পাই। দুজনেরই নিন্দুকের সংখ্যা প্রচুর, কিন্তু অদ্ভুতভাবে এদের বই এবং সিনেমা – দুটোই ব্লকবাস্টার হয়! দুজনের কেউই তথাকথিত বই এবং সিনেমার ‘সমঝদার’দের সার্ক্ল-এ কল্কে পায়না, কিন্তু তাতে তাদের কিছু যায়-আসে বলে তো মনে হয় না। চেতন ভগতকে আমার অতটা ভাল লাগেনা, কিন্তু সলমানকে, বিশেষ করে ‘ওয়ান্টেড’-উত্তর সলমানকে, আমার দুর্ধর্ষ লাগে। কারণ জানতে চাইলে বলতে পারবো না, সবকিছুর কি আর কারণ হয় রে পাগলা?
যাই হোক, সিনেমাটা শুরু হওয়ার মিনিটখানেক বাদেই দুটো জিনিসের প্রেমে পড়ে গেলাম – প্রথমটা বরফঢাকা পাহাড় আর সবুজ উপত্যকার কোলে অবস্থিত সুলতানপুর গ্রামের, আর দ্বিতীয়, সেই গ্রামের ছোট্ট ফুটফুটে মেয়ে শাহিদার। মেয়েটা বড্ড সুইট আর কিউট, দেখলেই মনে হয় একটু আদর করি।
সিনেমার গল্পটাকে এক লাইনেই বলে দেওয়া যায়। পাকিস্তান-নিবাসী শাহিদা তার মায়ের সঙ্গে দিল্লীর নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগা থেকে বাড়ি ফেরার পথে হারিয়ে যায়, মা চলে যান পাকিস্তানে, আর ছোট্ট শাহিদা মালগাড়ি চেপে চলে আসে কুরুক্ষেত্রে, যেখানে তার সঙ্গে দেখা হয়ে যায় হনুমানভক্ত পবন ‘বজরঙ্গী’ চতুর্বেদীর, যে কিনা দায়িত্ব নেয় শাহিদাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার।
এক লাইনের এই গল্পটাকে বলতে পরিচালক কবীর খান পৌনে তিন ঘন্টার একটা সিনেমা বানিয়েছেন। এই সুপারসনিক যুগেও ধীরেসুস্থে গল্প বলার একটা বিরল ক্যালি আছে ভদ্রলোকের, আর তার চেয়েও যেটা ভাল ব্যাপার, সেটা হচ্ছে যে এই বলার মাঝে দর্শক কখনোই ‘বোর’ হয়না বিশেষ, যার মূলে আছে কবীরের প্রেজেন্টেশান।
কমেডি এই ছবির একটা বড় পাওনা। পবন যখন শাহিদাকে সঙ্গে করে দয়ানন্দের বাড়িতে আসে, সেখানে যে সব তুলকালাম মজার কান্ড ঘটে, সেগুলো দেখতে খুব ভাল লাগে, বিশেষ করে যে ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যায় যে শাহিদার বাড়ি পাকিস্তানে এবং সে মুসলমান। পবন এবং দয়ানন্দের মেয়ে রসিকার মধ্যে যে প্রেমের আদানপ্রদান চলে, সেটাও খুব মিষ্টি।
সিনেমার প্রথমার্ধে যেটুকু খামতি ছিল, সেটুকু দ্বিতীয়ার্ধে ঢাকা পড়ে যায় চাঁদ নবাবের কল্যাণে। এই চাঁদ নবাব পাকিস্তানের একজন পাত্তা-না-পাওয়া রিপোর্টার। পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া, তারের নীচ দিয়ে পারমিশান নিয়ে পাকিস্তানে ঢোকা ভারতীয় ‘টেররিষ্ট’-ই হবে, এবং পবনের সম্পর্কে চাঁদ নবাবও প্রথমে তা-ই ভাবে। কিন্তু সবকিছু জানার পরে চাঁদের মনোভাবও বদলে যায়। চাঁদের সাহায্যেই পবন শাহিদার গ্রাম খুঁজতে আরম্ভ করে। শেষমেশ কিভাবে তারা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছয়, সেই নিয়েই ছবির বাকিটা।
অভিনয়ে সবাই দারুণ। ছোট ছোট ভূমিকায় যাঁরা ছিলেন – বর্ডারের উটে চড়া টহলদার থেকে পাকিস্তানের তরুণ বাস কন্ডাকটর – সকলেই যথাযথ। মৌলবীর ভূমিকায় ওম পুরী, দয়ানন্দের ভূমিকায় শরদ সাক্সেনা, শাহিদার মায়ের ভূমিকায় মেহের ভিজ এবং রসিকার ভূমিকায় করিনা কাপুর সুন্দর অভিনয় করেছেন। করিনার অবশ্য এই ছবিতে খুব বেশী কিছু করার ছিলনা।
তবে ছবিটা দাঁড়িয়ে আছে তিনজনের ওপর। শাহিদার চরিত্রে হর্ষলি মালহোত্রা অনবদ্য অভিনয় করেছে। কোনো কথা না বলে, শুধুমাত্র অভিব্যক্তি দিয়ে অভিনয় করা এত্তটুকুনি বাচ্চার পক্ষে খুবই চাপের ব্যাপার, কিন্তু এই কঠিন কাজটা এই মেয়েটা অনায়াসে করে দিয়েছে। ফাটাফাটি!
দ্বিতীয়জন, চাঁদ নবাব, ওরফে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি। লোকটাকে যত দেখছি, তত মুগ্ধ হচ্ছি। হার্ডকোর কমার্শিয়াল বা সফট্কোর ইন্টেলেকচ্যুয়াল, সব ধরণের ছবিতেই নওয়াজ নবাবের মতন অভিনয় করেন। এই ছবির দ্বিতীয়ার্ধটাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি। সলমানের সঙ্গে একটা দুর্দান্ত কেমিস্ট্রি আছে নওয়াজের, সেটা আরো একবার প্রমাণিত হল।
শেষে আসি সলমানের কথায়। সলমান এই ছবিতে সুপারহিরো নন, কথায় কথায় টি-শার্ট খোলেন না, একাই একশজন গুন্ডাকে পিটিয়ে লাট করে দেন না। এই হনুমানভক্ত পবন অনেক বেশী মানবিক, অভিনয়টাও খারাপ করেননি, কমেডি টাইমিংটাও বেশ ভাল লেগেছে।
এতক্ষণ অবধি সবই ভালভাল কথা বলা হল, তাই বলে একেবারেই যে খারাপ কিছু নেই, তা নয়। শেষের দিকে ভারত-পাক বর্ডারকে গেটক্র্যাশ করে এপার-ওপার করা, নিজের বাড়ির বাগান ভেবে বর্ডারে পায়চারি করা – এগুলো একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে, না করলেও চলত। তবে এগুলো দেখতেই তো পাবলিক আসে, এগুলোর জন্যেই তো সলমানের জন্য উত্তাল সিটি পড়ে হল্-এ, সে এমনই সিটি যে মাল্টিপ্লেক্স না সিঙ্গল স্ক্রীন, তা বোঝা যায়না।
জয় বজরঙ্গী!
সল্লু ভাইজান রক্স্!
(ছবি উৎসঃ গুগ্ল্)
উমদা লেখা। দেখতে হচ্ছে ছবিটা।
ধন্যবাদ দাদা। 🙂
দেখে নিন, খারাপ লাগবে না আশা করি 🙂
bahubali tao dekhe nio…
ভাবছি… 🙂
Lekha ta besh bhalo. Bajrani Bhaijan cinema ta satyi khub bhalo.
দেখেছিস নাকি? 🙂
Review ta besh bhalo laglo. Eta thik je joto boyesh barche toto grohonjoggyota barche Salman er. Se bitorkito image er jonnoi hok ba bhalo script er jonno 🙂
যা বলেছিস। 🙂