এই তো…আমার সঙ্গে তোরা এরকম করলি তো? করতে পারলি? উত্তমকুমারের মতন হাসতে হাসতে প্লেন থেকে নেমেছিলাম, তোদের ক্লিকবাজিতে যে ক্ষুদিরাম হতে হবে, সেটা মাইরি তখন বুঝতেই পারিনি। কি বলছিস, আমি উত্তমকুমার আর ক্ষুদিরামকে চিনলাম কি করে? ওরে গাড়লের দল, এখন আমি তোদের থেকে আড়াই লেভেল ওপরে আছি, বেহ্মজ্ঞানের আগের স্টেজ, তাই আপনা থেকেই স-ও-ব জেনে ফেলেছি।
যাই হোক, যেটা বলছিলাম। ক্ষুদিরাম হতে হবে জানলে কি আর তোদের কথায় রাজী হতাম? আসার আগে দাদা বলেছিল, গান্ধীগিরি না দেখাতে… মহাত্মাজী এখন শুধু নোটেই থাকেন, অন্য জায়গায় গান্ধীগিরি দেখালে আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার চান্স আছে। কিন্তু ওই যে…দু’পাতা বেশী পড়ে ফেলেছিলাম যে! মনে হয়েছিল দেশের কাজে লাগবো, রত্নাকর থেকে বাল্মীকি হব… সেইজন্যে স্যুটকেস ভর্তি করে সব মালঝালও নিয়ে এসেছিলাম, যেগুলো ঠিকঠাক ‘ফলো’ করতে পারলে তোরা সব ব্যাটাকে ধরতে পারতিস।
আমি ভেবেছিলাম আমার হাল্কা কোনো সাজা হবে…আফটার অল, আমার জন্যেই সবাই সাজা পাবে, আর আমি কেস সাল্টে ফের বুর্জ খালিফার টং-এ উঠে কাবাব খাবো, সেটা তো হয়না, চোখে লাগে…তাই আদালত আমাকে ছোটোখাটো কোনো কেস দিয়ে ছেড়ে দেবে। কিন্তু…ও বাবা, গোটা কেসটা তো শালা আমিই খেয়ে গেলাম! বাঘকে বাগে আনতে পারলি না, দাউদের তো টিকিই ছুঁতে পারলি না, মাঝখান থেকে বলির পাঁঠা হলাম আমি! কি করে জানবো, তোরা ছেলেবেলার সেই ছড়াটা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলিস? কোন্ ছড়াটা? সেই যে – সব ব্যাটাকে ছেড়ে দিয়ে বেকুব ব্যাটাকে ধর!
আমার সারেন্ডারটা একটা ব্লান্ডার ছিল, আর তোরা সেটাকে দিব্যি এন্ক্যাশ করে বাহবা লুটে নিলি…কিন্তু কাজের কাজটা করতে পারলি কি? বাইশ বছর ধরে ঘষে গেলি, কিন্তু বাঘের দেখা পেলি না। বাঘটা আমার দাদা হতে পারে, কিন্তু আদতে ব্যাটা ঘুঘু মাল, আমার মতন বেকুব না। পাকিস্তানে ঘাপটি মেরে বসে রইলো। নাঃ, ভুল বললাম, দিব্যি বুক চিতিয়েই রইলো, মাঝে মাঝেই বাঘের মতন হালুমহুলুম করলো, আর তোরা সেটা বেমালুম হজম করে নিলি! কখনও-সখনও অপোনেন্টের হুড়কো বা বিবেকের পিন খেয়ে পাকিস্তানের কাছে মিনমিন করে বলতিস দাদা আর দাউদকে ফিরিয়ে দিতে, কিন্তু ওরা সেটা শুনবে কেন? শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু – ওরা এই নীতিতে বিশ্বাসী…দাউদের জুজু দেখিয়ে দেখিয়েই ওরা তোদের মাত করে দিল। বই, বৌ আর বন্দী – একবার হাতছাড়া হলে কি আর ঘরে ফেরে রে পাগলা? তোরা এখনও বলিস, “দে না বাবা…দাউদ আর বাঘকে ফিরিয়ে”, আর ওরা বলে, “ভাগ্ শালা”, মাঝেমাঝে আবার সেটাও বলে না… ভাট বকছিস ভেবে এককান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দেয়।
মরি মরি!
আমার মার্সি পিটিশনকে যে তোরা রিজেক্ট করবি, সেটা জানাই ছিল। আমাকে না লটকালে তোরা বুক বাজিয়ে ‘জাস্টিস ডিলেইড ইজ নট জাস্টিস ডিনাইড’ বলতিস কি করে? তাও বৌ-বাচ্চার মুখ চেয়ে কয়েকটা পিটিশান ঝেড়েছিলাম, যদি মিরাক্ল-টিরাক্ল ঘটে। সেটা ঘটেনি, ঘটার কথা ছিলও না…তবে সেই পিটিশানের চাপে তোদের রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল। এমনিতে তো বছরের নয় মাসই ছুটি খায় তোদের কোর্ট, লাল ফাইলগুলো সব ধূলো পড়ে সাদা হয়ে যায়, কিন্তু আমার জন্য নাকি মাঝরাতে কোর্টের দরজা খুলেছিল আলাপ-আলোচনা করার জন্য, আর অত রাতে দরজা খোলার জন্য নাকি একটা রেকর্ডও করে ফেলেছিস তোরা। অবশ্য বেশীক্ষণ টানতে পারিসনি, ঘন্টাখানেকের মধ্যেই তল্পি গুটিয়ে ঘুমোতে চলে গিয়েছিলি। আমি অবশ্য এতে দোষের কিছু দেখিনা, শরীরটাকে তো দেখতে হবে আগে। তবে এইসব কীর্তিকলাপের ফলে নিজেকে মাইরি হেব্বি কেউকেটা লাগছিল।
লটকানোর দুদিন আগে থেকে যা ট্রিটমেন্ট পেলাম না মাইরি, জীবনটা ধন্য হয়ে গেল। কাগজে-চ্যানেলে-ফেসবুকে-ট্যুইটারে শুধু আমাকে নিয়েই আলোচনা – কেউ দিয়েছে তেড়ে গালি, কেউ আবার সাজিয়েছে সিম্প্যাথির ডালি। আমি সবটাই চেটেপুটে খেয়েছি।
গতকাল ভোরে আমি ঝুলে গেলাম, আর তোরা আমার প্রতি মিনিটের কার্যকলাপ টেলিকাস্ট করলি ব্রেকিং নিউজ হিসেবে। কখন ঘুম থেকে উঠলাম, কি কি করলাম, কি ব্রেকফাস্ট খেলাম, কোন্ বইয়ের কত নম্বর পাতার কত নম্বর প্যারাটা পড়লাম, পড়ার পরে কি রি-অ্যাকশন দিলাম – তোরা মাইরি জেলের বাইরে থেকেই সব জেনে গেলি! আমি তো ভাবছিলাম প্রাতঃকৃত্যে কোন, রঙের ইয়ে করেছি, সেটা সলিড না সেমি-সলিড, সেই বিষয়েও তোরা মতামত দিবি। ধন্যি তোদের অধ্যবসায়, এর কানাকড়িও যদি ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারতিস, তাহলে এতগুলো টেররিষ্ট পলাতক থাকতো না।
এখন কদিন আমাকে নিয়ে তোরা জমিয়ে আলোচনা কর্…আমি টেররিষ্ট না দেশপ্রেমী, আমাকে লটকানো বৈধ নাকি অবৈধ – এইসব নিয়ে বিদগ্ধ গাম্বাট আর হাফ্-আঁতেলরা তক্ক করুক, আমি মজা লুটি।
শুধু কাদম্বিনী নয় বে, আমিও মরে গিয়ে প্রমাণ করব যে আমি মরি নাই…অন্তত কিছুদিনের জন্য বটেই।
আলবিদা।
Amader deshe sob bichar er punkhonapunkho jana jaye, karur prandando hole keno lukochori hoye ke jane…. Nepal theke niye asha holo na, nijei dhora dilo, setao aabcha!
Je scooter paowa gechilo seta or e chilo abar bank transaction ta or A/c thekei hoyechilo seta proved…Tahole tabor tabor aantel ba Ex detective head ba Bihari Singho ra keno oppose korchilo , thik bujhlam na…. Ek kothay Dhora theke fnashi puro tai dhowasha …
Bhalo likhechis
তোর কথাগুলোর সঙ্গে পুরো একমত।