আমার নাম সীমান পঞ্চানন খাস্নোবিস, লোকে অবস্য আমাকে পাঁচু মস্তান নামেই ভাল চেনে। এম এল এ-দার সঙ্গে সঙ্গে ঘুরি, আর দাদার অর্ডার পেলেই একে-ওকে ধরে ক্যালাই। তবে আজকাল আমার চাপটা একটু কমেছে, কেননা পার্টি থেকে নিদ্দেস এসেছে, হিমেস হতে হবে। বুইলেন না নিস্চই কি বলতে চাইছি। মানে হচ্ছে হিমেস যেমন গান আর অ্যাক্টিং, দুটোই পারে, সেরকম নেতাদের এখন নেতাগিরি আর গুন্ডাগিরি, দুটোই কমবেসী চালাতে হবে। জমানা বদলে গেছে। ওদের জমানায় যেমন নেতারা সুধু ফিতে কাটতো আর মস্তানরা গলা, এখন সেরকম করলে হবে না। দোলামাসি, সোনালীপিসি, কেষ্টদা, শঙ্কুস্যার, আরাবুলভাই – এদের মতন হতে হবে, যাকে বলে টু-ইন-ওয়ান। এই অর্ডার পেয়েই তো সেদিন এম এল এ-দা পাড়ার ভুবনবুড়োকে এমন চমকালো, ওফ্, দেখে আমারই পিলে চমকে গেল। সুধু কি তাই? বুড়োর ছেলে চোপা চালাচ্ছিল বলে শালার কানের বারান্দায় এমন একখানা চটকনা দিল যে পুরো হুব্বা হয়ে গেলাম। দাদা যে এরকম বুড়িমার চকোলেট বোমার মতন ফাটতে পারে, আগে জানতাম না মাইরি!
তবে দাদার মতিগতি বোঝা ভার। এই তো সেদিন, দুই বাস্কো ম্যাগি আমার হাতে দিয়ে বলল, “নে পাঁচু, এগুলোর সৎকার কর, তোর বৌদি আর এসব বাড়িতে রাখবে না বলে দিয়েছে। তুই খেলে খা, না হলে ফেলে দে”। আমি তো হাঁ, কেননা ম্যাগি খেতে দাদা খুব ভালবাসে। হুব্বা হয়ে দাদার দিকে তাকিয়ে আছি দেখে দাদা বলল, “জানিস না, সরকার থেকে ম্যাগি ব্যান করে দিয়েছে তো। ওতে মারাত্মক পরিমাণে লেড্ আছে, তাই আজ থেকে আর খাব না”।
লেড্ কি? খায় না মাথায় দেয়? ম্যাগিতে লেড্ থাকা ভাল না খারাপ? এরকম গুচ্ছ পোস্নো মাথার মধ্যে কিলবিল করছিল, দাদাকে দু’চারটে জিজ্ঞেস করতেই রেগে ফায়ার! তিন নম্বর পোস্নো সুনেই বলল, “শালা হারামি, এত কথা কিসের? যা বললাম কর্”।
কি আর করি! তার দুদিন আগেই দাদা ভুবনের ছেলের বদন বিলা করে দিয়েছে, তাই ওকে আর না ঘাঁটিয়ে বাস্কোদুটো বগলদাবা করে বাড়ি নিয়ে এলাম। খাবার জিনিস, কেউ ফ্যালে? সকালের জলখাবারে চা আর লেড়ো খেয়ে খেয়ে হেজে গিয়েছিলাম মাইরি! তাছাড়া আমি জজবাগান মেড্, ওসব লেড্ফেড্ আমার কচু করবে! কালীখুড়োর দোকানে পাউচের পর পাউচ তুফান আর উত্তম হজম করে দিলাম, আর সামান্য লেড্ওয়ালা ম্যাগি হজম করতে পারবো না?
আমি ম্যাগি খাচ্ছি সুনে পেটো তো অবাক, এমন ভাব দেখালো যেন আমি গান্ধীবুড়োর সঙ্গে এক গেলাসে মাল টানছি। ওকে বললাম, “ছাড়্ তো বে! ওসব পরীক্ষাফরীক্ষা আমি অনেক দেখেছি। বিজ্ঞের বিচিদের কোনো কাজ নেই, তাই এসব আনসান করে”।
সুনে পেটো মাথা নেড়ে বলল, “কি বলছিস? এরা সব কত বড় বড় সায়েন্টিস্ট!”
“ছোঃ, সায়েন্টিস্ট না বা-! যে মাকড়ারা এদ্দিনেও ঠিক করতে পারেনা যে লাল চা বেসী উপকারী না দুধ চা, তাদের কথা তুই বিস্সাস করিস?”
আর কিছু বলেনি পেটো। কোন্ মুখে বলবে? ধরে নিচ্ছি লেড্ হেব্বি খতরনাক জিনিস, তবে তার চেয়েও তো কত খতরনাক জিনিস আছে বাজারে, তাই না? মাঝে তো সুনেছিলাম সব্জিওয়ালারা নাকি সাকসব্জীর গায়ে রঙ মাখিয়ে বিক্রি করে, কিসব কেমিক্যাল-টেমিক্যাল নাকি মাখায় ওগুলোতে, তা সেসব খাওয়াও কি তাহলে বন্ধ করে দেব? মাঝেমাঝেই সুনি মুর্গীর সদ্দি, শুয়োরের জ্বর, পাঁঠার হার্নিয়া… এটা খেওনা, সেটা খেওনা – শালার যত্ত ভাটবাজি। এইসব বিদগ্ধ গাম্বাটদের কথা সুনলে চুমু ছাড়া আর কিছুই খাওয়া যাবে না।
তবে আসোল খিল্লী হয়েছিল ম্যাগি ব্যান হওয়ার পরে। কোথাও কিছু নেই, হঠাৎ করে বেঁড়েপাকাগুলো বচ্চন আর মাধুরীকে নিয়ে টানাটানি সুরু করল… বিসবছর আগে ওরা নাকি ম্যাগির অ্যাড করেছিল, আর তাতে নাকি বলেছিল ম্যাগি বিন্দাস খেতে। মাধুরী নাকি ম্যাগির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর, আর ওর নাকি না জেনেসুনে ম্যাগিকে বিন্দাস বলা উচিৎ হয়নি। এই নিয়ে কি বাওয়াল, কি বাওয়াল! আরে কাকা, বলেছিল তো বলেছিল, তাতে এত কিচাইন করার কি আছে রে ভাই? সিনেমাতেও তো কত লোকে কতকিছু করে, তা সেগুলোকে কি আমরা সত্যি বলে ধরে নিই? আজব মাল মাইরি এরা, কাস এরা গ্যাঁড়ার কেসটা জানতো!
আমাদের গ্যাঁড়া কেলেকুচ্ছিৎ মাল, রাস্তার পিচের চেয়েও কালো মালটা। আমরা সবাই ওকে অমাবস্সা বলে ডাকি। সেই কোন্ কচিবয়স থেকে গ্যাঁড়ার ইচ্ছে ফস্সা হবে, তার জন্য ও যে কত ডজন ফেয়ার-অ্যান-লাব্লি গালেমুখে ঘষেছে তার হিসেব নেই। কিন্তু বেচারা ফস্সা তো হয়ইনি, উল্টে ক্রিম ঘষেঘষে গাল আর ঠোঁট খস্খসে হয়ে গেছে, গ্যাঁড়ার বৌ ওকে আর চুমু খায় না, খেতে দেয়ও না। তাহলে আজ অব্দি যত লোক ফেয়ার-অ্যান-লাব্লির অ্যাড করেছে, গ্যাঁড়া কি তাদের সবার পেছনে হুড়কো দিতে যাবে?
যত্ত বালপনা!
এই ছাপ্পান্ন ইঞ্চি ছাতিওয়ালা বুড়োটা যবে থেকে পোধানমন্ত্রী হয়েছে, তবে থেকে শালা বাওয়াল দিচ্ছে। প্রথমে ম্যাগি ব্যান করলো, আবার দুদিন আগে মাগী ব্যান করেছে। বলে কিনা পানু দেখা যাবে না। লাও ঠ্যালা! শালা মাসেমাসে থ্রীজি-র পয়সা দিই কেন তাহলে? রামদেবের কাছ থেকে কপালভাতি সেখার জন্য? এই কদিন আগে ফোনটা ফর্ম্যাট করালাম, ঝাক্কাস ছবিটবি আসছে, তার মধ্যে এসব সুনলে কার না মটকা গরম হয়? বুড়োর আর কি, তিনকাল গিয়ে এককালে ঠেকেছে, ওর এখন এসব লাগে না। কিন্তু তাই বলে বাকিদের এরকম বাম্বু দেওয়ার মানে কি? ‘আচ্ছে দিন’ আনার নাম নেই, এদিকে ‘কালি রাত’ আনার বেলায় ঝান্ডা উঁচিয়ে দৌড়াচ্ছে! পাব্লিক কিন্তু ছেড়ে দেবে না বস, আমাদের ল্যাংচায় যদি রস সর্ট পড়ে, তাহলে পরের ভোটে এমন হাল করব যে তোমাদের ল্যাংচা সুকিয়ে কিসমিস হয়ে যাবে। তখন বুঝবে…বোতল বোতল জাপানী তেল মারলেও সাপ কুন্ডলী পাকিয়ে সুয়েই থাকবে, ফণা তুলবে না।
এদিকে বক্তিয়ারি আছে ষোলআনা – বলে কিনা বাচ্চাদের জন্য পানু সাইটগুলো তুলে দিচ্ছে! সুনলে পা থেকে মাথা অব্দি সব জ্বলে যায় মাইরি। এতই যদি বাচ্চাদের ওপর দরদ, তাহলে এই যে সব বুড়ো ঢ্যামনাগুলো বাচ্চাদের সব্বোনাস করছে, তাদের ধরে ক্যালা না। ওদিকে আসারাম বাপু শালা জেলে বসে সাক্ষী লোপাট করছে, আর এদিকে আমরা এট্টু সানি লিওন দেখলেই গাত্রদাহ! খবরের কাগজ আর টিভি খুললেই তো ধস্সণ আর সীলতাহানি – তা এইসব দেখে তো বাচ্চারা সক্তি কাপুরই হবে, নাকি? তার জন্য কি আর আলাদা করে পানু সাইটের দরকার আছে? রাধে মা মিনিস্কার্ট পড়ে ধম্ম মাড়ালে কিছু না, আর ব্যাচেলর ছেলেপুলে নেট দেখে এট্টু হাত মারলেই বিলা, নাকি?
এই জন্যেই শালা দেসটার কিস্যু হবে না। এতই যদি দরদ, তাহলে কাগজ খুললেই যে গোলাগুলি আর খুনোখুনি, কাসব-উসমান-দাউদের ছড়াছড়ি, ধক্ থাকলে আগে এদের ব্যান করে দেখা, তবে বুঝবো তোরা সত্যিই দেসের জন্য, দেসের বাচ্চাদের জন্য, ভাবনাচিন্তা করছিস। সে বেলায় তো হিরো হিরণ – সাধ নেই, সাধ্যও নেই।
পোঁদে নেই চাম, শালা হরেকেষ্ট নাম।
ফোট্ শালা!
পুনশ্চঃ পাঁচু মস্তানকে অনেকদিন ধরেই বলছিলাম কিছু লেখার জন্য, দেশ ও দশ সম্পর্কে ওর যা মনে আসে। আজকাল অফিসের চাপে পাঁচুর সঙ্গে দেখা হয়না বিশেষ। তবে পাঁচুও আমার মতই ল্যাদখোর, দিচ্ছি-দেবো করে এতদিন ঝুলিয়ে রেখেছিল। অবশেষে কাল অফিস থেকে ফিরে শুনি মস্তানটা আমার জন্য একটা খাম রেখে গেছে, যার ভেতর থেকে এটা বেরলো। কয়েকটা বানান ঠিক করা ছাড়া বাকিটা টো-টো দিয়ে দিলাম।
পাঁচুর মুখের ভাষাটার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সহজ কাজ নয়, অন্তত আমি হলে পারতাম না। কাজেই সেলাম ঠুকলাম।
ধন্যবাদ কুন্তলা। 🙂
panchu hoche asol hero……….koto sohoje ato kotha bole dite pare…..jio ostad kurnish
ধন্যবাদ বন্ধু। 🙂
তোদের প্রশ্রয়েই পাঁচুর এত বাড়বাড়ন্ত।
Panchu is back…. কপালভাতি, পাঁঠার হার্নিয়া,সীলতাহানি etc…puro bachai kora vocabulary….fatafati guru
ধন্যবাদ বন্ধু। 🙂
Pachu Mastan zindabad. bhalo hoyechche lekha ta.
ধন্যবাদ। 🙂 পাঁচুকে জানিয়ে দেব তোর কথা।