– আঃ, ফাইন্যালি ল্যান্ড করল!
– সত্যিই তাই।
– কাল সকালে প্রথমেই কেশবদার দোকানে যাব।
– কেন?
– শারদীয়া কিনতে। এই ক’বছরে শারদীয়া কি জিনিস, ভুলেই গিয়েছি। তোমার জন্য কিছু আনব?
– আমার জন্য…বর্তমান আর প্রতিদিন এনো, ঠিক আছে?
– ডান।
***
– বেশ হয়েছে! যেমন কাল যায়নি। কতবার করে বললাম, চল্, দেশপ্রিয় পার্কের ঠাকুরটা দেখে আসি। ন্যাঃ, উনি নাকি ষষ্ঠীর দিন যাবেন! এখন দ্যাখ কেমন লাগে, পুজোটাই বন্ধ হয়ে গেল। ভাগ্যিস সেদিন দেখে এসেছিলাম…গ্রুপে সবচে’ বড় দুগ্গার ছবি পোষ্ট করে এখন গোটা পুজোতে বেশ রেলা নেওয়া যাবে, জয় মা!
***
– আব্বে শালা, এটা তুই?
– হ্যাঁ রে, আমিই!
– দাঁড়া দাঁড়া, ভাল করে দেখি, এই তুই সে-ই তুইই কিনা!
– দ্যাখ তাহলে।
– ওঃ, ভাবা যাচ্ছেনা যে এটা তুই। কদ্দিন বাদে দেখা হল বল তো?
– প্রায় এগারো বছর।
– উফ্, মানে চার হাজার দিন…জিও কাকা। সেই অষ্টমী, সেই ম্যাডক্স, সেই তুমি আর আমি, গেছো দুই হারামি, মাঝে শুধু বয়ে গেছে দশটি বছর। তারপর বল, কেমন আছিস? কোথায় আছিস? বিয়ে করেছিস? কবে করলি? চ্যাঁ ভ্যাঁ আছে?
– এক এক করে উত্তর দিই? আমি আছি…
***
– অ্যাই ভূতো, স্টার, সুপারস্টার আর মেগাস্টারের অর্ডারটা কি রে?
– আজ্ঞে দাদা, স্টার সবার নিচে, আর মেগাস্টার সবার ওপরে।
– আচ্ছা। শালা চ্যানেলগুলো যত্ত আনসান পুজোকমিটিগুলোকে সুপারস্টার-মেগাস্টার বানিয়ে দিচ্ছে! কেন রে? আমার পুজোটা কি ফ্যালনা?
– কি বলছেন দাদা? কথা হয়ে গেছে দাদা…আমরা হল্ অফ ফেম পুরষ্কার পেতে চলেছি।
– সেটা আবার কি জিনিস? খায় না মাথায় দেয়?
– এটা দাদা, মেগাস্টারেরও ওপরে, মগডাল যাকে বলে।
– ওঃ, তাহলে তো ঠিকই আছে। বেকার ভাবছিলাম! যাঃ, একটা পেগ বানা।
***
– এই যে রমাকান্ত, অঁবোঁপ্যাঁ হর্ষ চ্যানেল কিন্তু অবিদার পুজোকে হল্ অফ ফেম দিয়েছে, আমরাও সেটাই দিচ্ছি তো?
– কিন্তু স্যার, মানে আমাদের বিচারকদের ভোটে তো অবিদার পুজো দু’নম্বরে আছে।
– না না, এসব কি বলছ? পাগল নাকি? অষ্টপ্রহর চ্যানেলটাকে কি তোমরা তুলে দিতে চাও? ওসব ভোটফোট গুলি মারো, অবিদার পুজোই যেন আমাদের চ্যানেলের ‘সেরার সেরা’ অ্যাওয়ার্ডটা পায়, বুঝতে পেরেছো? নইলে কিন্তু…ফিসফ্রাই কেন, মোচার চপও জুটবেনা।
– ওক্কে স্যার…
***
– গুরু, রোজ ঠিক এই দশটা-সোয়া দশটার সময় নিয়ম করে প্যান্ডেলে কি কর বল তো? সেই চতুর্থীর দিন থেকে দেখছি।
– ঠিকই বলেছিস, আমিও সেই চতুর্থীর দিন থেকেই দেখছি।
– কি এত দেখো? এসময় তো ভীড় থাকেনা বেশী।
– দাঁড়া দাঁড়া, মেলা বকিস না, দেখতে দে।
– কি দেখছ বল দেখি? আইশ্লা… এ তো… মাইরি গুরু, ডুবে ডুবে জল খাচ্ছ নাকি?
– না বে। বছরের বাকি দিনগুলোতে তো মেয়েটা রোজ সকালে এসি গাড়ী হাঁকিয়ে অফিস কেটে পড়ে, রাস্তায় পা পড়ে না…এই কদিনই দেখছি দশটা-সাড়ে দশটা করে প্যান্ডেলে মাকে একবার প্রণাম করতে আসছে। তাই আর কি…মানে…
– জয় গুরু। এন্জয় গুরু।
***
– উফ্ আর পারিনা…যেরকম পেটুক বাপ, তার তেমনি পেটুক মেয়ে! বাপ মোগলাই খেয়ে এসে এখন কোল্ড ড্রিঙ্ক গিলছেন, আর মেয়ে কোল্ড ড্রিঙ্ক গিলে মোগলাই খাওয়ার বায়না ধরেছে! উল্টোপাল্টা খাবে, তারপর আমার হবে জ্বালা! এই যে, দেখে যাও মেয়ের কান্ড!
– কি হল, চেঁচাচ্ছ কেন?
– মেয়ের আবদার শুনেছ? মহারাণী এখন মোগলাই খাবেন।
– বেশ তো, পরের প্যান্ডেলেই খুকীর মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হবে।
– সন্ধ্যে থেকে বাপ-বেটীর খ্যাঁটন তো কম হচ্ছে না।
– আঃ, এরকম কর কেন? এই তো তিনটে দিন, তারপর তো তোমার হাতের ফাইভস্টার কুমড়োর ছক্কাই আমরা সোনামুখ করে খাবো ডার্লিং। ইয়ে, তোমার জন্যে একটা ডেভিল বলি?
– যত্তোসব! হুঁউ…
***
– ষষ্ঠীর দিন কুড়িটা ছবি পোষ্ট করেছিলাম, সব মিলিয়ে…উম্ম্, দুশোটা লাইক পেয়েছি। কাল ছবি ছিল পনেরোটা, লাইক পড়েছে একশো ষাটটা। আজ অন্তত তিনশোটা লাইক পেতেই হবে, বেস্ট ড্রেসটা আজকে পড়ে বেরোব, তারপর ম্যাডক্সে গিয়ে একটা ফাটাফাটি ফটোশ্যুট …দেখি তিনশো হয় কিনা। তবে যাই হোক, ইনিয়াটা যেন আমার থেকে কম লাইক পায়, একটু দেখো মা…
***
– কি গুরু, এত মন দিয়ে ফোনে কি ঘাঁটছ?
– গ্রুপে ছবি পোষ্ট করছি।
– কিসের ছবি?
– আহাম্মক, পুজোর সময় কি বিশ্বকাপের ছবি পোষ্ট করব? প্যান্ডেলের ছবি দিচ্ছি।
– প্যান্ডেলের ছবি? সেকি গো? তুমি তো ঠাকুরই দেখো না।
– ওরে পাগল, ছবির জন্য কি আর ঠাকুর দেখতে হয় রে? এক গ্রুপ থেকে ছবি ঝেড়ে অন্য গ্রুপে পোষ্ট করি, সবই কপি-পেস্টের খেলা বন্ধু।
– ধন্য তুমি গুরু, একই অঙ্গে কত্ত রূপ মাইরি!
– হুঁ হুঁ বাওয়া, আমি ধম্মেও আছি, জিরাফেও।
***
– ওফ্, ওরেবাবারে ওরেবাবারে ওরেবাবারে… শান্তি শান্তি শান্তি। যা ধকল গেল, গায়ের ব্যথা মারতেই তিন দিন চলে যাবে।
– এতেই ক্লান্ত হয়ে পড়লে গিন্নী? ওদিকে ওরা কিন্তু এখনও নাচাকোঁদা চালিয়ে যাচ্ছে।
– জানি জানি, যত্তোসব! আমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে, কিন্তু নিজেরা নেচে চলেছে। বলিহারি যাই, এদের ফূর্তির কি কোনো শেষ নেই? তিনদিনের নাম করে দশদিন ধরে নেচে চলেছে, নেচেই চলেছে?
– আহা, এই তো কটা দিন। বাকি বছর তো হাতে ভেসলিন। তাছাড়া কত ভক্তি করে তোমাকে এরা।
– ভক্তি? কচুপোড়া করে! সব তো সেলফি তুলবে বলে হামলে পড়ছে, আমাদের দিকে দুদন্ড তাকানোর ফুরসৎ আছে কারো? সেলফি সেলফি করেই এরা গেল!
– বাবা দেখেছো, ফেবুতে অলরেডি সামনের বারের পোষ্টার পড়ে গেছে, আর নাকি তিনশো চুয়াল্লিশ দিন বাকি।
– ব্রাভো!
– তবে নেক্সট টাইম কিন্তু ওই দোলা-নৌকা-হাতিফাতি করে যাবো না, খুব ধকল যায়। হার্লে দিতে না পারলে কিন্তু আমি যাচ্ছি না, এই বলে দিলাম।
– সে হবেখন। তার আগে, গণশা, আমাদের একটা সেলফি তুলে দিবি?
এ লেখাটা গতকালই পড়েছি। কিন্তু কিছু লেখা হয়নি। আমার মনে পড়ল অরিজিতের গত বছর পূজোর সময়ের লেখার কথা। মুম্বাই তে কিছু পূজোয় ঠাকুর দেখা। ভায়া, এবারের লেখা কিন্তু অনেক আলাদা, জমাটি আর গভীর। চালিয়ে যাও। আমি কিন্তু তোমার লেখার বড় ফ্যান।
কমেন্টের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা। তোমার মতন পাঠক পেয়ে আমিও ধন্য। 🙂
pujor choto choto chabi pelam tomar lekhar madhyeme . Tobe Selfie er ebar baro bara bari.. Money hoy Salman Khan er “Selfie le le” te inspired hoye i. tobe ekta kotaho chalu hoye gahcche beshi boro hoyeo naa Deshopriya hoye jabe.
বাঃ, কথাটা বেশ মজার তো! 😀
amader khub porichito chena jana choritto gulo ke pelam………darun………ki sundar laglo bole parbo na bojate
ধন্যবাদ বন্ধু। 🙂