ইদানিং অফিসে বসে বসে খুব ব্লগ পড়ছি। আমার দু-তিনজন বন্ধু ব্লগ লেখে, সেগুলো তো পড়িই, সেই সঙ্গে ওদের ব্লগ থেকে অন্য ব্লগের লিঙ্কও পাওয়া যায়। সেগুলিও গোগ্রাসে গিলতে থাকি। কাজের জায়গায় অকাজ করলে যা হয় আর কি! এই অব্দি ঠিক ছিল, কিন্তু আজ বিপত্তি বাধল। গরীবের ঘোড়া রোগ এর মতন আমারও ব্লগ লেখার দুর্মতি হল, এবং বঙ্গবন্ধুর মত আমারও মনে হল যে “আমারে দাবায়ে রাখতে পারবা না”! ব্যস, যেমন ভাবা তেমন কাজ, আন্তর্জাল থেকে নামিয়ে ফেললাম অভ্র, আর মাইক্রোসফট্ ওয়ার্ড এর একটা ফাইল খুলে বসে পড়লাম। বড়সড় গোলমালটা হল এখন। খাতা রেডি, কলম রেডি, হবু লেখক রেডি, কিন্তু বিষয়?? আমার হাল হয়েছে বিয়ে করতে আসা বরবাবাজীর মতনঃ সব আয়োজন সম্পূর্ণ, কিন্তু কনের দেখা নাই! কী বিপদ, শেষে কী তীরে এসে তরী ডুবে যাবে? আমার ব্লগার হওয়া হবেনা? এত তো সবাই লিখছে, আমার বেলাতেই এরকম কেন হবে? খাতাকলম নিয়ে বসলে না হয় মা সরস্বতীর দ্বারস্থ হওয়া যেত, কিন্তু এ যে আধুনিক ল্যাপটপরূপী খাতাকলম, এখানে কি মা সরস্বতীকে ডাকলে ফল হবে? কাকে ডাকব? বিশ্বকর্মা? তিনি কি শুনবেন আমার ডাক? বিশেষ করে ১৭ই সেপ্টেম্বর ছাড়া যখন তাঁকে মনেই পড়েনা! তবে কি লেখাটা পুরো মাথায় ছকে নিয়ে বসা উচিত ছিল?
ছোটবেলা থেকেই লেখকদের আমি আলাদা চোখে দেখি। মনে হয় তাঁরা যেন রক্তমাংসের মানুষ নন, তাঁদের লেভেলটাই আলাদা। নইলে এত্ত এত্ত লেখা কি মন থেকে বানিয়ে বানিয়ে লেখা সম্ভব? ইস্কুলে এক লাইন বাক্যরচনা করতে আমাকে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হত, এদিকে বড়জেঠুর বাড়ীর বই এর আলমারিতে দাড়িবুড়োর রচনাবলীর কত্ত খন্ড! উনি এক জীবনে যা লিখে গেছেন, পাবলিক সারাজীবনে শুধু যদি ওনার বইই পরে, তাও শেষ করতে পারবে না! বঙ্কিমবাবুর আবার অন্য ব্যাপার, ওনার লেখার ভলুম হয়ত বেশি না, কিন্তু ভাষা! উফ, শব্দ তো নয়, থান ইঁট এক একখানা। সেইজন্যে পাঠ্যপুস্তকের বাইরে বঙ্কিম পড়াই হয়নি আমার, অবশ্য তা নিয়ে খুব একটা দুঃখও নেই বটে! আমি বরং শরৎবাবুর অনেক বেশি ভক্ত ছিলাম ছোটবেলায়। সাংসারিক কূটকচালি খারাপ লাগত না। মদ খেয়েও যে হিরো হওয়া যায় এবং মেয়েদের ভালবাসা পাওয়া যায়, সেটাও ওনার থেকেই শিখলাম। তারপর অল্প বয়েসে পেকে গিয়ে সুনীল-শীর্ষেন্দু-সমরেশ(বসু, মজুমদার দুইই)-বুদ্ধদেব (বসু, গুহ দুইই)ইত্যাদি “বড়দের বই” ধরে ফেলেছি, বাতাবিলেবু-জামবাটি-কলাগাছ শব্দগুলির গূঢ় অর্থ জেনেছি এবং বাংলা অভিধানে গালিগালাজের স্টক দেখে বিস্মিত হয়েছি। পাঠক হিসেবে তারপর নানা ঘাটের জল খেয়ে এখন বইয়ের পাতার সঙ্গে সঙ্গে ল্যাপটপের মাধ্যমেও বই পড়া চালিয়ে যাচ্ছি।
কিন্তু আমি তো লেখক হতে চাই! আমার লেখকসত্তা প্রকাশিত হওয়ার জন্য আকুলিবিকুলি করছে, এমতাবস্থায় অসহায় আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ল্যাপটপের সামনে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছি। লেখকদের সম্পর্কে ছোটবেলার ধারণাটা আরও বদ্ধমূল হচ্ছে। লেখার এলেম কোনোকালেই ছিল না আমার, ওইজন্যে ক্লাস এইট থেকে উচ্চমাধ্যমিক অবধি বাংলা পরীক্ষায় একটাই রচনা লিখে এসেছিঃ বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ? এই শিরোনামের আরও কয়েকটা variety ছিল, যথাঃ বিজ্ঞান মানুষের জন্যে, মানুষের জীবনে বিজ্ঞানের দান প্রভৃতি(অন্যগুলো এই মূহুর্তে মনে পড়ছে না)। কিন্তু সবগুলোতেই আমার বক্তব্য একই থাকতো, শুধু বিন্যাসটা বদলে দিতাম। কম লিখতে হবে বলে ভাবসম্প্রসারণের বদলে সারাংশ লিখেছি, কোনোদিন কোনো রচনাতেই আমার শব্দসংখ্যা নির্ধারিত মাত্রার সীমা ছাড়ায়নি, বরং প্রতিবারেই ৫০-১০০ শব্দ কম পড়ে যেত। তখন রচনার মাঝখানে কিছু “জল” মেশাতে হত, কেননা আমি জেনে গিয়েছিলাম যে বড় বড় পরীক্ষায় অনেক বেশী খাতা দেখতে হয় বলে পরীক্ষকেরা শুধুমাত্র ভূমিকা আর উপসংহারটুকুই মন দিয়ে পড়েন, মাঝখানটা অত খেয়াল করেন না। কথাটা মনে হয় মিথ্যে নয়, নচেৎ বাংলা পরীক্ষায় নম্বর আরো কম হত।
তো এই যখন অবস্থা, তখন আমার লেখক(বা ব্লগার)হবার ইচ্ছেটা হওয়ার কথাই ছিল না। কিন্তু কবীর সুমন তো বলেই দিয়েছেন,“ইচ্ছে হল এক ধরনের গঙ্গাফড়িং/অনিচ্ছেতেও লাফায় শুধু তিরিংবিরিং”। তাই আমার অনিচ্ছা থাকলেও আমি অপারগ । দুনিয়ার অনেক অসম্ভব ঘটনার মতন এটাও ঘটার অপেক্ষায়, শুধু একটু আগুনের দরকার। সলতে পাকানোর কাজটা না হয় শুরু করা হল, দেখাই যাকনা, আগুন জ্বলে কিনা!
Very nice read – bondhu chaliye jao …
chalie ja……. nijer moner khorak gulo dhora thak blog er patay…… Dyuti di
ধন্যবাদ অনির্বাণ এবং দ্যুতিদি 🙂
Aagun sudhu jwale ni – ei sheetkaale basanti phool joy-er (pathokder jonno English joy) mala-o gNethe felechhe eddom. Ganga-foring lafiye choluk abiroto.
অনেক অনেক ধন্যবাদ ।:)
কমেন্ট দেখে মন পুরো বাগান-বাগান হয়ে গেল। 🙂 🙂
সাবাস্ নন্দলাল, তোমার হবে! 🙂 পড়ে খুব ভালো লাগল।
অনেক ধন্যবাদ অনির্বাণ। 🙂