বিশ্বকাপ ২০১৪ – কিছু সংলাপ, কিছু প্রলাপ

wc_40

–  কিরে বগা, বিশ্বকাপ দেখলি?

–  কি যে বলিস! দেখব না আবার? হুলিয়ে দেখেছি।

–  তোর ক্যাপা আছে মাইরি! আটই জুলাই-এর পরেও দেখেছিস?

–  দ্যাখ অগা, ওরকম দাঁত ক্যালাস না। এক একদিন ওরকম হতেই পারে, ওটা নিয়ে অত লাফালাফির কিছু নেই।

–  বুঝলাম! তবে তোদের হেব্বি খিদে মাইরি, সেভেন কোর্সের পরে পেট ভরল।

–  হুঃ! এমন করছিস যেন তোরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিস? সেই তো ধ্যাড়ালি।

–  হুম। সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে আমাদেরই দুই গোলে জেতার কথা।

–  তোরাও কি শেষমেশ ‘ভাল খেলিয়াও পরাজিত’-দের দলে নাম লেখালি? অবশ্য তোদের তো ওই আড়াইজনের টিম, ওই নিয়ে কি আর এগারোটা বাঘাবাঘা খেলোয়াড়ের সঙ্গে পাঙ্গা নেওয়া যায়?

–  আড়াইজন কি করে হল শুনি?

–  মেসি একজন, মাসচারেনো আর তোদের গোলকিপার রোমেরো মিলে একজন, আর বাকি আটজন মিলে হাফ!

–  বাজে বকিস না! আমাদের এই হাল হলে তোদের কি? তোদের টিমে কটা প্লেয়ার আছে, তোর হিসেবে?

–  সেমিফাইনালের আগে তিনটে ছিল – নেইমার, সিলভা আর বাকি সবাই মিলে আরো একজন।

–  তাহলে সেমিফাইনালে তো মাত্র একটা প্লেয়ার ছিল রে!

–  যা বলেছিস! এরকম খারাপ অবস্থা মনে হয় এই প্রথম হল। যাক্‌গে, বাকি ত্রিশটা দলের খেলা কেমন দেখলি বল?

–  দারুণ! তবে এবার মাইরি ছোট দলগুলোর খেলা দেখে ফিদা হয়ে গেছি।

–  যা বলেছিস। সেকেন্ড রাউন্ডে কি ফাইট দিল রে! দম ছুটিয়ে দিয়েছিল সব বড় দলগুলোর। চিলি একেবারে গোঁফে লঙ্কা ঘষে দিয়েছে মাইরি! আমি তো ভাবলাম সেদিনই বুঝি যবনিকা পড়ে গেল।

–  তোদের হাল দেখে খুব হেসেছিলাম রে বগা। কিন্তু দুদিন পরে সুইসরা আমাদের যা ঘোল খাওয়াল, বাব্বা! স্বীকার করতে লজ্জা নেই, টেনশনে টিয়াপাখি হয়ে বসেছিলাম পুরো।

–  একদম ঠিক। এবারের গোলকিপারগুলোকে দেখেছিস? শুনলাম এবারে নাকি সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ডটা টাচ্‌ করা গেছে, কিন্তু ওই গোলকিপারগুলো না থাকলে আরো কত গোল যে হত!

–  নিশ্চয়ই। ওচোয়া, এনিয়েমা আর নাভাসকে আমার দুর্দান্ত লেগেছে। ওরা প্রতি ম্যাচে অ্যাটলিস্ট তিন-চারটে করে গোল বাঁচিয়েছে।

–  তুই ভাব, ওচোয়া ছেলেটা নাকি কোনও ক্লাবে খেলেনা! কোনও মানে হয়? তবে আমার মতে, ‘গোল্ডেন গ্লাভ’-টা নাভাসকেও দেওয়া যেত। ম্যানুয়েল নয়্যার যদিও ব্যাপক খেলেছে, তবুও!

–  আহা, কোস্টারিকা তো কোয়ার্টারেই হেরে গেল, নইলে হয়ত ওকেই দিত।

–  হল্যান্ডের খেলা কেমন লাগলো, অগা?

–  শুরুটা অসাধারণ লেগেছিল। প্রথম ম্যাচেই স্পেনকে যা দিল, উফ্‌ফ্‌, গুনেগুনে পাঁচখানা একেবারে! তবে নক্‌আউটে ঠিক জমলো না!

–  ঠিকই বলেছিস রে, গোল করতে পারছিল না! জানিসই তো, হল্যান্ডের ওপর আমার আবার একটা ইয়ে আছে। আমার কাছে ভ্যানপার্সির গোলটা এই বিশ্বকাপের সেরা গোল।

–  মেসি ইরানের বিরুদ্ধে যে গোলটা করেছিল, সেটাও ক্লাসিক।

–  ঠিক। সেরা পাঁচটা গোলের লিস্ট বানাতে দিলে কোন্‌গুলোকে রাখবি, ডেডবল সিচ্যুয়েশনের গোলগুলো বাদে?

–  উম্‌ম্‌, স্পেনের বিরুদ্ধে ভ্যানপার্সি, ইরানের বিরুদ্ধে মেসি, হল্যান্ডের বিরুদ্ধে কাহিল, উরুগুয়ের বিরুদ্ধে হামেস, আর মেক্সিকোর বিরুদ্ধে স্নাইডারের গোলটা। এর বাইরে অবশ্য থাকতেই পারে, মানে সব খেলা তো আর দেখিনি!

–  আরেব্বাস! কাঁটায়-কাঁটায় মিলিয়ে দিয়েছিস তো রে! আমার অবশ্য ফাইনালে গোৎজে’র গোলটাও দুর্দান্ত লেগেছে। তোর অবশ্য সঙ্গত কারণেই সেটা ভাল লাগবে না।

–  বড্ড বাজে বকিস! এই বিশ্বকাপের সেরা প্লেয়ার বাছতে বললে কাকে বাছবি?

–  মুশকিল, খুউব মুশকিল! অনেককেই দারুণ লেগেছে। এক এক করে বলি?

–  নিশ্চয়ই।

–  প্রথমত, মেসি। একার দায়িত্বে টিমটাকে নক্‌-আউটে তুলল, প্রি-কোয়ার্টার, কোয়ার্টার আর সেমিফাইনালেও দারুণ খেলল। ফাইনালে অবশ্য অতটা খেলতে পারেনি।

–  ও-ও তো মানুষ, দুই গন্ডা অপোগন্ড খেলোয়াড়ের মাঝে পড়ে নির্ঘাৎ ফ্রাস্ট্রু খেয়ে গিয়েছিল!

–  এটা ভাল বলেছিস। দ্বিতীয়ত, রবেন। স্পেনের বিরুদ্ধে ওর প্রথম গোলটা মনে আছে?

–  মনে নেই আবার? পুরো ছবি! গোটা টুর্নামেন্টেই রবেন দুর্দান্ত খেলেছে, ওর দৌড়গুলো একদম ডেড্‌লি ছিল, বত্রিশ কিলোমিটার বেগে দৌড়োয় নাকি। বাপ্‌রে, ২২৩-এর চেয়েও জোরে ছোটে। তবে ডাইভগুলোর কথা আর বললাম না!

–  হেঁ হেঁ। মেক্সিকোর বিরুদ্ধে ডাইভটা কিন্তু ফাউলই ছিল!

–  প্রথমটা তো ফল্‌স্‌ ছিল, নাকি? যাক্‌গে, আর কাকে ভাল লাগলো?

–  তৃতীয়ত, নেইমার। একটা ধুর টিমকে সেমি অবধি নিয়ে তো গেল, বল? কলম্বিয়ার ওই হতচ্ছাড়া প্লেয়ারটা নেইমারের পিঠে উঠে না গেলে অন্যরকম ফলাফল হতেই পারত।

–  মনে হয় না। তোদের টিম এবারে আদতেই ঢপের ছিল। শুধু পাবলিসিটি দিয়ে তো আর কাপ জেতা যায়না! আরেকজনের নাম মিস্‌ করে গেলি তো!

–  কে?

–  হামেস। বাচ্চা ছেলেটাকে তোরা কী মারই না মারলি, লজ্জা হওয়া উচিৎ তোদের! আমার তো ওকে দেখে অভিমন্যু মনে হচ্ছিল।

–  ওসব সেন্টুমার্কা কথা ছাড় অগা! তাছাড়া অভিমন্যু হওয়ার পক্ষে হামেস অনেক সিনিয়ার। তবে এবারের বিশ্বকাপে বাংলা কমেন্ট্রি আমার দুরন্ত লেগেছে, বিশেষ করে পল্লবদাকে।

–  হ্যাঁ, আমারও। ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা নামলেই উনি কিরকম “আমাদের টিম” বলতেন! হেব্বি মজা লাগতো।

–  হেহেহে। চ্যাম্পিয়ন টিম নিয়ে কিছু বলার আছে, অগা?

–  নাঃ! আমরা যোগ্য টিমের কাছেই হেরেছি। জার্মানির এগারোটা প্লেয়ারই দুর্ধর্ষ। কি খেলল! কাকে ছেড়ে কার নাম করব মাইরি? তাছাড়া এটাও স্বীকার করতে বাধা নেই, যে মেসি যত ভালই হোক, ও মারাদোনা নয়।

–  যা বলেছিস। এই বিশ্বকাপের সেরা একাদশ বাছতে বললে কাকে কাকে নিবি?

–  গোলে নয়্যার, ডিফেন্সে লাম, বোয়েতিং, হুমেল্‌স্‌ আর থিয়াগো সিলভা। বাকিটা তুই বল শুনি।

–  মিডফিল্ডে মাস্‌চেরানো, রবেন, মেসি আর নেইমার। ফরোয়ার্ড লাইনে হামেস আর মুলার।

–  বেশ ভাল টিম। দুই-চারজন বাদ পড়ে গেল, যাক্‌গে, সবাইকে তো আর নেওয়া যায়না! ওরা না হয় রিজার্ভে থাকবে। এবারে তুই একটা ঝুল টিম বেছে ফেল দেখি।

–   ঝুল টিম? সে তো অনেক সময় লাগবে রে অগা!

–  ধুর বোকা! ওরে পাগল, সেমিফাইনালে তোদের যে টিমটা নেমেছিল, সেটাই এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে ঝুল টিম। বড়জোর তোদের অস্কারের বদলে আমাদের আগুয়েরোকে ঢোকাতে পারিস।

– বেড়ে বলেছিস মাইরি! ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকেও নেওয়া যায়। তবে আমি আর একটা চেঞ্জ করতে চাই।

– কিরকম?

– দাভিদ লুইজের বদলে লুই সুয়ারেজ!

–  দুর্ধর্ষ! গোল দিতে না পারুক, বিপক্ষ গোল দিতে এলে কামড়ে তো দিতে পারবে, কি বল?

–  আলবাত!

–  দেখ ভাই, তোর, আমার কারো টিমই জেতেনি, তার ওপর আজ হেব্বি বাদলা। তাহলে একটু ঢুকুঢুকু হয়ে যাক, কি বলিস?

–  হেঁ হেঁ হেঁ!

(ছবি উৎসঃ গুগ্‌ল্‌)

 

6 thoughts on “বিশ্বকাপ ২০১৪ – কিছু সংলাপ, কিছু প্রলাপ

  1. atalantabane জুলাই 17, 2014 / 12:27 অপরাহ্ন

    Asadharan , puro WC er golpo ta du joner sanglaper madhyame likhechcho . besh bhalo laglo .

  2. তথাগত জুলাই 18, 2014 / 9:57 অপরাহ্ন

    খুব সুন্দর সিনপসিস। বিশ্ব একাদশটাও একেবারে আমার খাপে খাপে মিলে গেছে। তবে একটা কথা — ব্রাজিলের সাপোর্টার আমিও, তবু বলছি, একা নেইমার থাকলে কি সেমিফাইনালের ফলাফলে খুব একটা হেরফের হত? বড় জোর এক আধটা গোল এধার ওধার হত হয়ত।

    দুষ্টু প্রশ্নঃ ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার দুই সাপোর্টার কি এত ভদ্রভাবে, মানে গালাগালি হাতাহাতি না করে, আলোচনা করতে পারে? 🙂

    • অরিজিত জুলাই 19, 2014 / 10:03 অপরাহ্ন

      ধন্যবাদ তথাগতদা। 🙂
      ঠিকই বলেছ, তাছাড়া অগাও তো বলেছে যে ব্রাজিলের টিমটা পুরোই ঢপের টিম ছিল।
      দুষ্টু প্রশ্নটা খুব মজার লাগল। ইয়ে, মানে, তা পারেনা ঠিকই, পছন্দমত কিছু অলঙ্কার দিয়ে দিয়ো, যেমন পছন্দ। 🙂 সব কথা কি আর লেখা যায়?

  3. Sujan অগাষ্ট 23, 2014 / 11:10 পুর্বাহ্ন

    Ai wold cup a germany team er sathe tader girl friends der kothao bolte hobe……….tarao ki kom akorshoniyo chilo

    • অরিজিত অগাষ্ট 23, 2014 / 11:32 পুর্বাহ্ন

      হ্যাঁ, একদম ঠিক বলেছিস। 🙂
      ওদের কথা মনে করিয়ে দিলি, মনটা উদাস হয়ে গেল!

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান