দুটো ভুলের পরে

একই দিনে, খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে, দু’দুটো ভুল করলে তার মাশুল তো দিতেই হয়! আমাদেরও হয়েছিল, কিন্তু সেটা যে ডালভাত-মার্কা নিরীহ নিরামিষ না হয়ে পেঁয়াজরসুন-মার্কা আমিষ ফ্লেভার পেয়ে যাবে, সেটা আমরা ঠিক বুঝতে পারিনি!

ঘটনার শুরু সকালবেলায়, যখন নীলুর হিউস্টনের অ্যাপার্টমেন্টে বসে আমি আর অভিরূপ আমাদের পূর্ব-পরিকল্পনা মত ডালাস যাওয়ার বিষয়টা একটু ছকে নিচ্ছিলাম। আমাদের তৃতীয় সঙ্গী হিলু তখনও যোগনিদ্রায় ব্যস্ত ছিল, তাই ওকে আর ঘাঁটাইনি।

চা খেতে খেতে আমাদের কথাবার্তা চলছিল, এমন সময় নীলুও সেই আলোচনায় যোগ দিল। আমরা ডালাস যাব শুনে মুখটা বেঁকিয়ে বলল, “তোরা ডালাস যাবি? হিউস্টন থেকে আবার ডালাসেও যাবি?”

আমি বললাম, “কেন, হিউস্টন থেকে কেউ ডালাস যায় না বুঝি?”

“তা কেন যাবেনা? কিন্তু বিশ্বাস কর, ওখানে নতুন কিচ্ছু নেই – সেই উঁচুউঁচু বাড়ি, সরুসরু রাস্তা, অনেক অনেক লোক আর গায়েগায়ে গাড়ি। তবে হ্যাঁ, ডালাস যেহেতু ইন্ডাস্ট্রিয়াল শহর, তাই কিছু কারখানার চিম্‌নী আছে, আর সেখান থেকে বেরোনো সাদাকালো ধোঁয়া আছে, যেটা তোরা হিউস্টনে পাবিনা। এখন তোরা যদি সেই ধোঁয়া দেখতে চাস, আমার কিছু বলার নেই!”

নীলুর কথাবার্তার মধ্যে একটা সবজান্তা আঁতেলসুলভ ব্যাপার আছে, যার জন্য ওর কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করা যায়না, আবার পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়াও যায়না। অভিরূপ গোলগোল চোখ করে ওর দিকে তাকিয়ে বলল, “তা তুই কি করতে বলিস? কিছু প্ল্যান আছে তোর?”

নীলু একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল, “প্ল্যান? সে তো বুড়ো আর বিবাহিতরা করে! আমরা তো কোনোটাই নই কাকা! তোরা যদি থাকিস, তাহলে তাসটাস খেলব, ল্যাদট্যাদ খাব, দুপুরে একটা ঘ্যামা ইন্ডিয়া বাফেতে খাওয়াতে নিয়ে যাব, তারপর বাকিটা দেখা যাবে!”

আমরা সবাই তখন জীবিত, অর্থাৎ কিনা ব্যাচেলর। ইন্ডিয়ান বাফের প্রতি তখন আমাদের একটা অমোঘ টান ছিল। অভিরূপ একটু নড়েচড়ে বসে নীলুকে জিজ্ঞেস করল, “ঘ্যামা বাফে বলছিস?”

নীলু বলল, “আরে হ্যাঁ রে। দুপুরে খাবি, রাত অবধি হাতে গন্ধ লেগে থাকবে!”

আরেব্বাস! এরকম গন্ধগোকুলমার্কা বাফের কথা শুনে আমরা একটু ভাবনায় পড়ে গেলাম। হিলুমহারাজের যোগনিদ্রা ততক্ষণে ভঙ্গ হয়েছে, সব শুনেটুনে ও নীলুর মতেই মত দিল। অগত্যা আমি আর অভিরূপও হিউস্টনে থেকে যাওয়াই ঠিক করলাম।

সেটা ছিল আমাদের প্রথম ভুল!

তবে দুপুর অবধি সময়টা বেশ ভালই গেল। জমিয়ে তাস খেলা হল, তাসের ফাঁকেফাঁকে মুড়ি-চানাচুর আর চা। দুপুরে নীলু আমাদের সেই লাঞ্চবাফেতে নিয়ে গেল। খাওয়াদাওয়া বেশ ভাল, ও খুব একটা বাড়িয়ে বলেনি বটে! গলা পর্যন্ত খেয়ে বাড়ি ফিরে সবাই ফ্ল্যাট হয়ে পড়লাম।

লাট খেতে খেতে ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’টা রিভাইস দেওয়াও চলছিল। এই সিনেমাটা আমার খুব প্রিয়, তাই অনেকবার দেখলেও কখনোই ‘বোর’ হইনা। সিনেমাটা শেষ হওয়ার পরে চোখদুটো একটু বুঁজে এসেছিল আমার, এমন সময় বেশ হট্টগোলে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল।

দেখি তিনমূর্তি মিলে সন্ধ্যার প্ল্যান করছে। হিলু বলল, “চলো বদ্দা, হিউস্টন ডাউনটাউনটা দেখে আসি। তারপরে একটা বার-এ গিয়ে খেয়েদেয়ে, আরো ঘোরাফেরা করে, ডিনার করে, বাড়ি ফিরব”।

বদ্দা, অর্থাৎ কিনা অভিরূপ, এই প্ল্যানে সায় দিল। নীলুও দেখলাম রাজি হয়ে গেল।

মার্চ মাসের সন্ধ্যা তাড়াতাড়িই নামে। তবে হিউস্টনের মার্চ মাস বেশ মনোরম, ঠান্ডা পড়েনা ওখানে খুব একটা, তাই পাতলা টি-শার্টেই কাজ চলে যায়। রেডি হয়ে, পায়ে চটি গলিয়ে, আমি নীচে নেমে এলাম, সিগারেট খাব বলে। মার্কিনমুলুকে ঘরের ভেতরে ধূমপান করা নিষেধ!

মনের সুখে সিগারেট টানছি, এমন সময় দেখি অভিরূপও নেমে এল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কি রে, বাকি দুজন কই?”

অভিরূপ বলল, “আসছে। দুটো টান দে তো!”

মিনিটপাঁচেক পরে দেখি দুই মক্কেল আসছে, চোখেমুখে কিরকম ফিচেল একটা হাবভাব। গাড়ির কাছে এসে নীলু বলল, “অভিরূপ, আমি একটা কথা ভাবছিলাম”।

নীলুর ভাবনা মানেই আমাদের চিন্তার বিষয়, যদিও তখনও ব্যাপারটা আমরা বুঝিনি। অভিরূপ বলল, “কি ভাবছিস শুনি একটু”।

“ডাউনটাউন দেখে আর কি হবে! তার চেয়ে চল, এখান থেকে একঘন্টা দূরত্বে একটা স্টেটপার্ক আছে, হান্টস্‌ভিল স্টেট পার্ক, সেইখানে গিয়ে আজ রাতে ক্যাম্পিং করব”।

অভিরূপ হাঁ হয়ে গেল। বলল, “ক্যাম্পিং? জিনিসপত্র লাগবে না?”

“আরে কাকা, ওসব ওখানেই ভাড়া পাওয়া যায়। কোনও চাপ নেই, আমি তো আছি”।

এই শুনে হিলু বলল, “তাছাড়া, এই সবে ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ দেখলাম, এরপর কংক্রিটের জঙ্গল দেখার কোনও মানে হয়না। চলো বদ্দা, প্রকৃতিদর্শন করে আসি!”

বুঝলাম, দুই মক্কেল মাত্র পাঁচ মিনিট আমাদের চোখের আড়ালে গিয়েই বৈপ্লবিক ভাবনাটা ভেবে ফেলেছে। আমি আর অভিরূপ পরস্পর মুখ তাকাতাকি করে রাজী হয়ে গেলাম শেষমেশ।

পাঁচ মিনিট ওদের একা ছেড়ে দেওয়াটা ভুল হয়েছিল, যেটা আমরা বুঝেছিলাম ঘন্টাপাঁচেক পরে, যখন…!

নাঃ, পরপর বলাই ভাল।

হান্টস্‌ভিল স্টেটপার্ক নামীদামী নয় মোটেই, হিউস্টন এবং তার আশেপাশের লোকজনেরাই সেখানে ক্যাম্পিং করতে যায়। কিন্তু তখন ‘স্প্রিং ব্রেক’এর মরসুম ছিল, ফলে পার্কে ঢুকে দেখলাম বেশ ভালই ভীড়। দুই হাত দূরেদূরেই তাঁবু ফেলা, লোকজন বেশ হুলিয়ে ক্যাম্পিং করছে বোঝা গেল। আমাদের সঙ্গে তাঁবুটাঁবু নেই, শুধু আসার পথে খানকতক স্যানউইচ, একটা হাফ সিভ্যাস আর গোটা ছয়েক ‘নেগ্রা মোদেলো’ বিয়ার তুলে আনা হয়েছিল। বিয়ারের চয়েসটা হিলুর, মেক্সিকান বিয়ার, খুব নাকি ভাল খেতে।

তবে আমাদের প্রথম কর্তব্য ছিল তাঁবু যোগাড় করা। পার্কের ভেতরে একটা অফিস খুঁজে পাওয়া গেল, সেখানে ঢুকে দেখি একজন বয়স্ক লোক ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে ঢুলছে। আমাদের আর্জি শুনে তার তো চক্ষুস্থির, বলল, “আমরা তো তাঁবু ভাড়া দিইনা! এখানে সবাই যে-যার নিজের জিনিস নিয়ে আসে। দেখছো তো এত লোক, এতজনের ব্যবস্থা করা যায় নাকি?”

অভিরূপের দিকে তাকালাম, দেখলাম ওর ফরসা মুখ লাল হয়ে গেছে। রাগেই মনে হয়! নীলু জিজ্ঞেস করল, “ইয়ে, মানে, কিছুই কি করা যায়না? অনেক দূর থেকে আসছি, তাহলে কি ফিরে যাব?”

লোকটা সাতপাঁচ ভাবল, তারপর বলল, “একটা ঘর আছে, ওই ওদিকে। সেখানে তোমরা থাকতে পারো, তবে বিছানাপত্তর নেই। এই নাও চাবি, আর বসার জন্য আমি তোমাদের এটা দিতে পারি”, বলে একটা ছেঁড়া কার্পেট এগিয়ে দিল।

আমাদের কাছে তখন ওটাই অনেক। ধন্যবাদ জানিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে এলাম। অভিরূপ নীলুকে জিজ্ঞেস করল, “শালা হারামি, তখন যে বললি সব নাকি ভাড়া পাওয়া যায়! এই কি তার নমুনা?”

নীলু সরলভাবে বলল, “আমি কি করে জানব? আগে এসেছি নাকি কখনও?”

অস্ফুটে কয়েকটা খিস্তি দিয়ে অভিরূপ গুম হয়ে গেল। আমরা ‘ওই ওদিকে’র ঘরটা খুঁজতে লাগলাম। হাঁটতে হাঁটতে বেশ জনবিরল জায়গায় চলে এলাম। যখন ভাবছি যে ঘরটর আদৌ নেই, এমন সময় হিলু বলল, “ওই যে, সিংহদরজা দেখা যাচ্ছে!”

সিংহদরজাই বটে! কাছে গিয়ে টোকা দিয়ে বুঝলাম, চারজনে একসঙ্গে ধাক্কা মারলে দরজা এমনিই ধ্বসে যাবে, চাবিটাবি লাগবে না। ভেতরে ঢুকে দেখি, বেশ ছোট ঘর, একটাও জানালা নেই, দরজাও ওই একটাই। গোটা ঘরটাই আসবাবশুন্য, শুধু সিলিং থেকে একটা কম পাওয়ারের বাল্ব ঝুলছে। লোকটা কেন কার্পেট দিয়েছে, সেটা এবারে বোঝা গেল।

কার্পেটটা পাতা হল। দেখে যতটা ছেঁড়া মনে হয়েছিল, পাতার পরে দেখা গেল তার চেয়ে অনেক বেশিই ছেঁড়া। ভাল অংশতে আমরা গুঁতোগুঁতি করে বসে পড়লাম। বসতেই অবশ্য শীতল মেঝে আমার পশ্চাৎদেশ জমিয়ে দিল!

দরজাটা শক্তপোক্ত না হলেও, অন্তত ভেতর থেকে বন্ধ করা যায়। কার্পেটের ওপর পা ছড়িয়ে বসে নীলু একগাল হেসে বলল, “তাঁবুর থেকে এটাই ভাল হল, কিনা? খোলা আকাশের নীচে তো আর থাকতে হচ্ছে না!”

অভিরূপের মেজাজ তখনও গরম, বলল, “তুই আর কথা বলিস না শুয়ার!”

খানিকক্ষণ পরে অবশ্য বেশ জমে গেল। আড্ডা, সিভ্যাস, নেগ্রা মোদেলো (যদিও বিয়ারটা খেতে জালি) আর তাসে গোটা ব্যাপারটা খারাপ এগোচ্ছিল না। এভাবেই হয়ত রাতটা কেটে যেত, কিন্তু সমস্যা এল অন্যদিক থেকে।

আগেই বলেছি, হিউস্টনে ঠান্ডা পড়েনা বিশেষ। সেদিনও, আমরা যখন বেরিয়েছিলাম, তাপমাত্রা ছিল পঁচিশ ডিগ্রী সেলসিয়াসের আশেপাশে। কিন্তু যত রাত বাড়তে লাগলো, ঠান্ডাটাও বাড়তে শুরু করল। একসময় আমাদের চারজনেরই বেশ কাঁপুনি ধরলো। হিটারের তো কোনও প্রশ্নই নেই, নিট হুইস্কি খেয়েও শরীর ঠান্ডা হতে আরম্ভ করেছে।

অভিরূপ কাঁপতে কাঁপতে বলল, “ঠান্ডায় জমেই কি শেষে মারা যাব রে?”

আমাদেরও তখন সেটাই মনে হচ্ছিল! নীলু বলল, “মাইরি, এরকম ঠান্ডা শালা আজকেই পড়তে হল?”

আরো খানিকক্ষণ কেঁপেটেঁপে স্থির হল একটু হেঁটে আসার। একটা চক্কর দিয়ে এলে হয়ত ঠান্ডাটা কমলেও কমতে পারে।

দরজা খুলে বাইরে বেরোলাম, রাত তখন দেড়টা। হাঁটতে হাঁটতে আমরা একটু জনবহুল জায়গায় চলে এলাম, যেখানে পরপর তাঁবু ফেলা আছে। বেশিরভাগ তাঁবুই নিস্তব্ধ, তবে কয়েকটা থেকে নাকডাকার আওয়াজ, আর কয়েকটা থেকে শীৎকার শোনা যাচ্ছিল।

একটা তাঁবুর বাইরে দেখলাম আগুন জ্বলছে! আগুন জ্বলতে দেখে এত ভাল এর আগে কোনোদিন লাগেনি। কাউকে বলতে হলনা, আমরা সবাই সেই আগুনের সামনে বসে হাতপা সেঁকতে লাগলাম।

কি আরাম!

তাপ নিতে নিতে নীলু বলল, “কে তুমি পুণ্যাত্মা, জ্বেলেছ এই অগ্নি, ধন্যবাদ তোমাকে, ভ্রাতা হও বা ভগ্নী!”

নীলুর একটু কাব্যিরোগ আছে, সেটা আমরা তার আগে ওর বাড়িতেই টের পেয়েছিলাম। জঙ্গলের ঠান্ডায় একটু সিঁটিয়ে গিয়েছিল, আগুনের তাপে আবার চাগিয়ে উঠেছে। আমরা ‘বহুৎ খুব, বহুৎ খুব’ বলে ওকে উৎসাহ দিলাম, তাতে ও বার খেয়ে একটা স্বরচিত সনেট শোনাতে যাবে, এমন সময়…

তাঁবুর ভেতর থেকে “হে ইয়্যু ফাকার্স” বলে এক বিশালোদর টপ্‌লেস টেক্সান বেরিয়ে এল, হাতে একটা শটগান নিয়ে!

আমরা সবাই তখন আগুনের চারপাশে বসে। টপ্‌লেস টেক্সান বন্দুক বাগিয়ে ধরে, ঈষৎ জড়ানো গলায়, চিৎকার করে যা বলল, তার মর্মার্থঃ এই মুহুর্তে তার ‘প্রপার্টি প্রিমাইসেস’ ছেড়ে চলে না গেলে সে গুলি চালিয়ে দেবে।

সিন বটে একখানা! টপ্‌লেস টেক্সান, হাতে শটগান, আর আগুন ঘিরে হুব্বা হয়ে ভয়ে কম্পমান চার মূর্তিমান!

কি বলা যায় ভাবছি, এমন সময় পাকা নীলুটা বলে উঠলো, “আমরা তো আগুন পোহাচ্ছি, তোমার প্রপার্টির কোনও ক্ষতি তো করছি না”।

“আগুনটা আমার”, বলে টেক্সান আমাদের দিকে শটগানটা তাগ করল।

হঠাৎ আমার মা-বাবার কথা মনে পড়ে গেল, সেইসঙ্গে উল্টোডাঙ্গার রাস্তা, পাড়ার ভুলো কুকুরটা, অলিপাব্‌, কফিহাউস আর বইমেলার কথাও। এমন সময় পাঁজরে একটা খোঁচা খেয়ে চমক ভাঙল।

দেখি বাকি তিনজন হাত তুলে উঠে দাঁড়িয়েছে, আর আমাকেও ইশারা করছে। ওদের দেখাদেখি আমিও হাত তুললাম, তারপর অ্যাবাউট টার্ন নিয়ে, কাঁপতে কাঁপতে সবাই ঘরে ফিরে এলাম।

ঘরের দরজাটা বন্ধ করে সবে কার্পেটে বসেছি, মিনিটদশেকও হয়নি, এমন সময় শুনি সেই টেক্সানের গলা। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে সমানে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা যে ট্রেসপাস করে ওর আগুনে আঁচ নিয়ে এসেছি, তাতে ও মোটেই খুশি নয়, সুযোগ পেলেই আমাদের দেখে নেবে ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমি শুধোলাম, “দরজাটা কি এর লাথি হজম করতে পারবে, হ্যাঁরে?”

আমার প্রশ্ন শুনে সবাই আরো ঘাবড়ে গেল, অভিরূপ বলল, “শালা, এসব কথা বলিস্‌না মাইরি”।

বলছি কি আর সাধে? নীলুর দিকে তাকিয়ে দেখি, সে-ও বেশ ভেব্‌লে গেছে।

টেক্সানটা আরো মিনিটপাঁচেক ধরে ওর স্টকে যত খিস্তি ছিল, সেগুলো শেষ করে, ফাইনালি জুতোর খচ্‌মচ্‌ শব্দ তুলে, চলে গেল। আমাদেরও ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো যেন!

যাক, যত গর্জায়, তত বর্ষায় না!

বাকি রাতটা আর কেউই ঘুমোতে পারলাম না।

ঘন্টাকয়েক পরে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বেরিয়ে এলাম। ঠান্ডায় সবারই অবস্থা কাহিল। গাড়িতে ফুল ব্লাস্টে হিটার চালিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। স্টেটপার্ক থেকে বেরিয়ে খানিকদূর গিয়ে একটা কফিশপে দাঁড়ানো হল। গরম কফি আর ডোনাট দিয়ে ব্রেকফাস্ট খেতে খেতে নীলু বলল, “ওঁ জবাকুসুম, সঙ্কাশং…”

এই শুনে অভিরূপ তেড়ে উঠলো, “চুপ কর! চুপ কর বলছি, শালা ঢ্যাম্‌না!”

উদীয়মান সূর্যের দিকে তাকিয়ে আমি আর হিলু হো-হো করে হেসে উঠলাম।