– কি হে ফেলুচরণ, খবর কি?
– আরে ব্যোমকেশদা যে! আসুন আসুন, অনেকদিন পরে দেখা হল আপনার সঙ্গে। কেমন আছেন? বৌদি কেমন আছেন?
– চলে যাচ্ছে ভায়া। বয়েস হয়েছে, এখন তো আর বেশি লাফঝাঁপ করতে পারিনা! সত্যও ভালই আছে।
– কি যে বলেন দাদা! আপনি হলেন ‘এভারগ্রীন’, বয়েসটা আপনার কাছে কোনো ফ্যাক্টরই নয়।
– হুঁ, ওসব ছেঁদো কথায় আমাকে ভোলাতে পারবে না! তোমার খবর বল, এখন তো তোমার পোয়াবারো হে! নতুন অবতারে আবির্ভূত হয়েছ, কেমন লাগছে?
– হেঁ হেঁ, তা মন্দ লাগছে না দাদা। নতুন ছোকরাটিকে বেশ মানিয়েছে, কি বলেন?
– হুঁ, তা বটে!
– গত কয়েকবছর ধরে যা চলছিল, মার্কেটে মুখ দেখানো যাচ্ছিল না দাদা! আমি কিনা চিরকাল মগজাস্ত্রের কেরামতি দেখিয়ে এসেছি, আর এদিকে আমার অবতারটি টিপিক্যাল কেরানিমার্কা একটা ভুঁড়ি আর চোখের তলায় বিয়ার ব্যাগ নিয়ে গুন্ডা পিটিয়ে বেড়াচ্ছে! আচ্ছা বলুন তো, আমি কি অ্যাকশন হিরো ছিলাম কোনোকালে? দু’চারটে ঘুঁসিটুঁসি মেরেছি কখনোসখনো, কিন্তু তাই বলে হার্ডকোর অ্যাকশন? ছি ছি!
– এইটুকুতেই ছি ছি করছ হে? আমার অবস্থায় পড়লে তো আত্মহত্যা করতে!
– কেন দাদা?
– কেন? আবার জিজ্ঞেস করছো কেন? তোমার যিনি স্রষ্টা, তিনি আমাকে নিয়ে একটা ছবি বানিয়েছিলেন। দেখেছ?
– আজ্ঞে, ইয়ে মানে, হ্যাঁ।
– তার পরেও বলছ ‘কেন’? তোমাকে তো তাও ওর ছেলে অ্যাকশন হিরো বানিয়েছে, কিন্তু আমাকে? বাপ তো আমাকে সাপুড়ে বানিয়ে ছেড়েছে! আমি ছাপোষা গেরস্থ বাঙালি, আর আমারই হাতে সাপ ধরিয়ে দিয়েছে? তার ওপর আবার বলে কিনা আমি ব্যাচেলর, আর অজিত বিবাহিত? অজিত, যে কিনা ঝর্ণা বলতে কলম ছাড়া কোনোদিন কিছু বুঝলো না, তাকে করে দিল বিবাহিত? তাও ভাল, ওর বৌটাকে সামনে আনেনি, ভাগ্যিস!
– ইয়ে মানে, ঠিকই বলেছেন দাদা। আপনার রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক।
– তবে? হতে পারি আমি মানিকের সৃষ্টি নই, কিন্তু তাই বলে আমি এত ফ্যালনাও নই যে আমার হাতে একটা খেলনা সাপ ধরিয়ে দেবে! আরো আছে। কবে আমি গোলাপ কলোনিতে গিয়ে জাপানী সেজে ‘ফঁতোঁ, ফঁতোঁ’ করেছিলাম হে? হতে পারে মানিকের অনেক নামডাক, পুরষ্কার-টুরষ্কারও অনেক পেয়েছে, কিন্তু তাই বলে এরকম ধাষ্টামো সহ্য করা যায়না। অমন সুন্দর একটা ক্লাইম্যাক্স, তারও একেবারে বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছে!
– কি বলব বলুন!
– সেই, তুমি আর কি বলবে? তোমার মালিক, তার বিরুদ্ধে কিই বা বলতে পারো তুমি? তবে হ্যাঁ, একটাই ভাল কাজ করেছিল মানিক, আমাকে একটুখানি সিঙ্গল মল্ট খাইয়েছিল!
– যাক, কিছু তো ভাল পেয়েছেন ওই ছবিটা থেকে!
– আওয়াজ দিচ্ছ ছোকরা? মানিকের ছেলের হাতে পড়ে বেঁচে গেছ হে তুমি। মানছি ছেলেটা বাপের নখের যুগ্যি নয়, তবুও।
– না গো দাদা, মোটেই সেরকম ব্যাপার নয়। সেদিন তোপসে এসে আমার কাছে খুব কান্নাকাটি করেছে। বেচারার খুব দুঃখু।
– কেন হে? ওর আবার কি হল?
– আর বলেন কেন? প্রথম অবতারটি ছাড়া ওর নাকি কাউকেই ভাল লাগেনি। দ্বিতীয়টা বড্ড চুপচাপ ছিল, তিন নম্বরটা পেছনপাকা, চোখেমুখে ঘোড়েল একটা ভাব। চারনম্বরটা তো ভাল করে কথাই বলতে পারতো না, আর এখনকারটা বড্ড মেয়েলি।
– বাঃ, ক্লাসিফিকেশনটা বেড়ে করেছে তো, বাচ্চাটার এলেম আছে! তার ওপর কথাগুলো ভুল বলেনি কিছু।
– হ্যাঁ, হাজার হোক আমার স্যাটেলাইট তো! তবে ওর দুঃখ কমাতে আমি ওকে একটা ওষুধ প্রেসক্রাইব করেছি, তাতে ভাইটা আমার অনেকটা শান্ত হয়েছে।
– কি প্রেসক্রিপশন হে?
– ওকে রাজা রায়চৌধুরীর হালের ছবিটা দেখিয়েছি। সেখানে সন্তুকে দেখে ও বুঝতে পেরেছে, এই দুনিয়ায় ওর চেয়েও দুঃখী কেউ আছে!
– তুমি পারো বটে ফেলুরাম! আর জটায়ু? ওর কি বক্তব্য?
– লালমোহনবাবু আর কি বলবেন? ওঁর কপাল তো শুরু থেকেই খারাপ, অবতারেরা কেউই টেঁকেনা বেশীদিন। তার ওপর এখন তো আবার উনি সিনেই নেই। তাই এখন কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছেন জটায়ু!
– বুঝলাম! তা ওর আর দোষ কি বল? কতজনই তো জটায়ু করলো, কিন্তু প্রথমজন ছাড়া বাকিরা তো পাতে দেওয়ার মতন না। আমারই মতন অবস্থা ওর। যে পেরেছে, আমাকে নিয়ে ছবি কিংবা সিরিয়াল বানিয়েছে – এখন তো শুনছি একটা বাহাত্তুরে বুড়ো ব্যোমকেশ করবে! বোঝো একবার। আরেবাবা, আমি কি মন্দিরের ঘন্টা নাকি, যার যখন ইচ্ছে বাজিয়ে চলে যাবে? তাও যদি ভাল করে করত! রাজিত ছাড়া সবাই আমার নাম ডুবিয়েছে।
– আপনার দুঃখটা বুঝতে পারি দাদা। কি করবেন বলুন? আপনাকে কেউই মনে হয় বুঝতে পারেনি। এমনকি ঋতুও তো –
– ও শালার নাম করবে না তুমি! ভাবলে এখনও আমার গায়ে কাঁটা দেয়! ওটা ব্যোমকেশ, না শুধু কেশ? দুরাত্তির ঘুমোতে পারিনি আমি ওই ছবিটা দেখে! আস্ত বা –
– থাক থাক দাদা, আর বলতে হবেনা। ইয়ে, আপনি আপনার শেষ ছবিটা দেখেছেন?
– নাঃ! তবে শুনেছি নাকি খারাপ করেনি আবীর ছোকরা। কিন্তু লাভ কি বল? ওকেও তো ভাঙ্গিয়ে নিয়ে গেলে তোমরা!
– এতে আমার আর কি দোষ বলুন?
– দোষ তোমার নয় হে, দোষ আমার কপালের!
– এতটা ভেঙ্গে পড়বেন না দাদা। আপনাকে নিয়ে সিরিয়ালও হচ্ছে, জানেন তো? ওটা কিন্তু আমার খারাপ লাগছেনা এখনও অবধি।
– হ্যাঁ, অজিত বলছিল। ও আর সত্য দেখে, আমি অবশ্য দেখিনি এখনও। আসলে নিজেকে দেখে আবার যদি ব্যোমকে যাই, আর ঘুম না আসে? বয়স হয়েছে তো, রাতে ঘুম না হলে বদহজম হয়।
– না দাদা, আমার অনুরোধ, একবার দেখুন, খারাপ লাগবেনা। আমাদের নবতম অবতারেরা খুব একটা খারাপ নয়।
– বলছো?
– হ্যাঁ। ভরসা রাখতে ক্ষতি কি?
– আচ্ছা, বলছ যখন, দেখব চেষ্টা করে! এখন যাই, বেলা অনেক হল, সত্য না খেয়ে বসে থাকবে।
– আসুন দাদা, ভাল থাকবেন।
– তুমিও ভাল থেকো ভাই।
প্রথম অবতারটি ছাড়া ওর নাকি কাউকেই ভাল লাগেনি। দ্বিতীয়টা বড্ড চুপচাপ ছিল, তিন নম্বরটা পেছনপাকা, চোখেমুখে ঘোড়েল একটা ভাব। চারনম্বরটা তো ভাল করে কথাই বলতে পারতো না, আর এখনকারটা বড্ড মেয়েলি। 😀 😀 😀 এক্কেরে ধ্রুব সত্য যারে কয় …
হেঁ হেঁ হেঁ…ধন্যবাদ। 😀
উফফফ! অসাধারণ। ব্যোমকেশের মনের দুঃখটা একেবারে খাঁটিভাবে ফুটিয়ে তুলেছো। তবে ফেলুদার সংলাপগুলো ঠিক জমলনা। সেভাবে যদি ভেবে দেখ, ব্যোমকেশের কপাল কিন্তু ফেলুদার চেয়ে ভাল। রাজিত কাপুরের সিরিজটা তো আছেই, তাছাড়া হালের অঞ্জন দত্তর ব্যোমকেশ সিরিজটাও অতটা খারাপ নয়। মানে সন্দীপ রায়ের ফেলুদার চেয়ে অনেক ভাল। চিড়িয়াখানাটা একেবারেই জমেনি সেটা ঠিক, কিন্তু রাজিত কাপুর পুষিয়ে দিয়েছিল। ফেলুদা কিন্তু সন্দীপ রায়ের হাতে পড়ে খারাপ থেকে খারাপতর হয়ে যাচ্ছে।
কমেন্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ তথাগতদা। 🙂
অঞ্জন দত্তের ব্যোমকেশ আমারও ভাল লাগে, মূলত আবীরের জন্য, তবে ও তো ছেড়ে দিয়েছে এখন, জানিনা নতুন ব্যোমকেশ কেমন হবে! তবে আমি ব্যোমকেশের সব ভার্সন দেখেছি (প্রায় হাফডজন আছে), আর রাজিত কাপুর এবং আবীর (প্রথমটা ছাড়া) বাদ দিয়ে বাকিগুলো ঝুলস্য ঝুল!
ফেলুদার বাদশাহী আংটি কিন্তু আমার বেশ লেগেছে। 🙂
দারুন লিখেছেন অরিজিত দা 😀 স্যালুট,বাংলাদেশ থেকে
ব্লগে আসার জন্য এবং কমেন্ট করার জন্য অনেক ধন্যবাদ তোমাকে মহম্মদ। 🙂
Asdharan , গোয়েন্দা ও সত্যান্বেষী jugal bandi bhaloi legechche , Satyi Rajit chara er kauke e Byomkesh bhaba jay na. Er ek abater (jini nijeo bikhatya parichalak) sei abhinay dekhe to Byomekesher bmyom hoye jaowa asmbhab noy. Tobe Abir bhalo abhinay korechche .
একদম ঠিক বলেছিস টুবুন। 🙂
Byomkesh er nabatama abatar (sushant singh rajput) ke niye kichhu montobyo nei Byomkesh er?
ব্যোমকেশ এখনও তাকে দেখার সুযোগ পাননি মনে হয়, তাই কোনো মন্তব্য দেননি। ছবিটা রিলিজ করলে হয়ত কিছু বলবেন।
কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ রোশনী। 🙂
কালকের খবর পড়িসনি বোধহয়, এর পরের ব্যোমকেশ হচ্ছে যিশু সেনগুপ্ত।
জানি! 😦
darun….byomkesh tai tragic hero hoe daralo….obissi Sandip er hathey Felucharan thakle o’o hoe jabe…. Actually duto’r proti aamra bangali ra ekti bias….. tai joto kharap e presentation hok na keno…… somolochona korte icche korena 🙂
একদম ঠিক বলেছিস। 🙂